লাইফ উইদাউট লাভ-৩

আমি দুই রুমের ছোট্ট একটা ফ্লাট নিয়ে থাকি। এক রুমেই চলে যায়। বাকী রুমটা পড়ে থাকে। মাঝে মাঝে ভাবি সাবলেট দিয়ে দেবো। কিন্তু সেটা আর হয়ে ওঠে নি। আমি নিজে মোটামুটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করি। কিন্তু ফ্লাটটাকে পরিষ্কার রাখা হয়ে ওঠে না। ভাইয়া ভাবী রুমে ফ্রেশ হচ্ছে। আমি এরই মাঝে চুলায় চায়ের পানি বসিয়ে দিলাম। অনেকক্ষণ চা খাওয়া হয় না। আমার নিজেরও চা খাওয়া হয় না। আমি মোটামুটি নিজের রান্না করতে পারি। একদম খেয়াল ছিলো না তাদের আসার সাথে সাথে খাবার দিতে হবে। এই বেলা রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিয়ে আসি। বেরোতে যাবো এই সময়ে ভাবী এসে হাজির । কাপ ধুয়ে চা ঢেলে নিলেন।

- মাস্টার কোথায় যাও?
- এই তো ভাবী কিছু খাবার নিয়ে আসি। 
- দেশে এসে দোকানের খাবার খাবো? এইটা কি বলো মাস্টার! ফ্রিজে বাজার করা না। 
আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম। ভাবী তখনি কোমরে কাপড় জড়িয়ে ফ্রিজের দিকে এগিয়ে গেলেন। 
- এত দূরের পথ জার্নি করে এসেছেন ভাবী। এখন থাক। খেয়েই দেখেন না ঢাকার রেস্টুরেন্টের খাবার। 
- আরে রাখো তো তোমার জার্নি। এখন আর জার্নিকে জার্নি মনে হয় না। তুমি এসে আমাকে দেখিয়ে দাও কোথায় কি রাখো। 



প্রেশার কুকারে মাংস চড়িয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলেন, মাস্টার বিয়ে করছো কবে? মাথার অবস্থা তো খারাপ। পুরোপুরি স্টেডিয়াম হয়ে গেলে তো মেয়ে পাবে না। মেয়ে দেখবো?

আমি কিছু বলার আগে দীপ্ত ভাইয়ার অট্টহাসির শব্দ পেলাম। তাকে একটু আগে চা দিয়ে এসেছি। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো, ঢেকি স্বর্গে গেলেও যেমন ধান ভাঙ্গে, তেমনি বাঙালী অবিবাহিত পাত্র পাত্রী পেলে বিনে পয়সায় ঘটকালী করে। মেলবোর্ণে তোর ভাবীকে সবাই ঘটক পাখি ভাবী বলে ডাকে। তিনি স্বেচ্ছাশ্রমে বেশ কয়েক যুগলের বিবাহ দিয়েছেন। ভাবী ভাইয়ার উপর কপট রাগ ঝাড়লেন। আজ অনেক দিন পর আমার ছোট্ট কিচেন গল্পে সরগরম হয়ে উঠলো। ছোট বেলায় এরকম হত। তখন আমাদের বাড়ীতে মাটির চুলায় রান্না হত। শীতকালে রান্না ঘরের সামনের উঠানে চুলা পাতা হত। সেখানে ধানের খড় দিয়ে রান্না চাপাতো মা। বাড়ি মামা খালা নানী ফুফুদের কেউ এলে চুলায় পিঠে বসে রাজ্যের সব গল্প হত। 

ভাবী রান্না শেষ করে ঘরে গেলেন। দীপ্ত ভাইয়া বললেন, শার্টটা তোর কাছে আজো আছে? আমি আমার গায়ের শার্টটার দিকে তাকালাম। ভেবেছিলাম দীপ্ত ভাইয়া চিনতে পারবে না। আকাশ নীল বর্ণের এই শার্ট। আজ বহুবছর পরে আমি পরেছি। 

লাইফ উইদাউট লাভ-১
লাইফ উইদাউট লাভ- ২

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন