লাইফ উইদাউট লাভ-৪

মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো। হু বলে ডাক শুনে আমি পাশ ফিরে শুইলাম। মা আমার মুখের উপরের কম্বল সরিয়ে বললেন, কি রে ভূলে গেছিস? ঘাটে যাবি না?
- সকাল হয়ে গেছে?
- সেই কখন ফজরের আজান দিয়েছে। এতক্ষণে তো ঘাটে লঞ্চ এসে গেছে। তুই যাবি না রহিমকে একা পাঠিয়ে দেবো?
- বড় ভাইয়া আসছে আর আমি যাবো না তাই কি হয়। তুমি শার্টটা দাও। 

শার্টটা গায়ে চাপিয়ে তার উপরে শাল চাপাতে হলো শাল খানা। বেশ ঠান্ডা। নিমের দাঁতন দিয়ে মেসওয়াক করতে করতে হাটা শুরু করলাম। আমার পিছে পিছে পা ফেলছে রহিম। রহিম আমার থেকে বছর দুয়েকের ছোট। কাজ কর্ম করার জন্য ওকে রাখা হয়েছে। বেশ হাসিখুশী প্রানচঞ্চল একটা ছেলে। বিকেলে মাঠ থেকে গরু আনার সময় খোলা মাঠে গলা ছেড়ে গান গায়। কেউ কোন কাজ করে দিতে বললে সানন্দে লেগে যায় সেই কাজে। সব কাজে সে মজা খুজে পায়। চারকূলে কেউ নেই তার। 

- কিরে রহিম, স্যান্ডেল কই তোর? এই শীতে খালি পায়ে আইছিস ক্যান?
- ছোড ভাই, স্যান্ডেল পরলি পা কুটকুট করে। আমি হাঁট্টি পারিনে। খালি পায় হাট্টি আমার খুব ভালো লাগে। মিয়া ভাই ইবার কদিনের ছুটিতে আইলো?
- কথা না কয়ে পা ফেল। লঞ্চ মনে হয় ঘাটে চলে আইছে এতক্ষণে। আরো আগে বারুতে হইতো। 
- না ভাই। এহনো আসে নাই। আসলি লঞ্চের গুড়গুড় শুনা যাতো। 



আমাদের বাড়ী সুন্দরবনের খুব কাছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই অনুন্নত। বড় ভাইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পড়ছে। আমাদের এই এলাকায় ভাইয়াই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ছাত্র। গ্রামে বিএ পাশ কয়েকজন আছে। কিন্তু তারা সবাই খুলনার বিএল কলেজে পড়া। ঢাকা থেকে খুলনা আসার পর আইডব্লিউর ঘাট থেকে লঞ্চে করে আমাদের গ্রামে আসতে হয়। রাত দশটার লঞ্চে উঠলে আমাদের এখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সকাল হয়ে যায়। আর এখন শীতের সময়। কুঁয়াশার কারণে লঞ্চ খুব আস্তে চলে। অজেদ মোড়লের পুকুর পাড় দিয়ে যাওয়ার সময় নিমের দাঁতন ফেলে দিয়ে কুলি করে মুখ ধুয়ে নিলাম। পুকুরের চারপাশে অনেক উঁচু উঁচু গাছ। পুকুরে রোদ পড়ে না। তাই পানি বরফ ঠান্ডা হয়ে থাকে। গরম কালে এই পুকুরে গোছল করে মজা। মুখ ধুয়ে মোছার আগেই একরাশ ঠান্ডা হাওয়া আমার নাকের ডগা ছুয়ে উড়ে গেলো। সেই ঠান্ডায় হিড়হিড় করে কেঁপে উঠলাম। 

লঞ্চ ঘাঁটে গিয়ে দেখি তখনো লঞ্চ আসে নাই। নদীর ওইপারে সুন্দরবন। ঘন সবুজের সমাহার। কিন্তু কুয়াশার চাঁদরে মোড়া। মিনিট পঞ্চাশেক বসার পরে লঞ্চের শব্দ শুনতে পেলাম। অপেক্ষার পর এই গুড়গুড় শব্দ কানে মধুর হয়ে উঠলো। আমি লঞ্চঘাটের উপর গিয়ে দাঁড়ালাম। শব্দ শোনার পর আরো মিনিট দশেক পর লঞ্চের দেখা পেলাম। মালপত্তর সহ ভাইয়াকে নামিয়ে নিলাম। ভাইয়ার সাথে তার এক দোস্ত এসেছে। সিনেমার নায়কদের মত দেখতে। মানুষ এত ফর্সা হয়? ফর্সা মানুষ আমি আগে দেখেছি কিন্তু এত ফর্সা আমি আগে দেখিনি। নিশ্চিত ফেয়ার এন্ড লাভলি মাখে রোজ দুইবেলা।

লাইফ উইদাউট লাভ-১
লাইফ উইদাউট লাভ- ২
লাইফ উইদাউট লাভ-৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন