লাইফ উইদাউট লাভ-১

৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ঢাকা বিমান বন্দর।

সন্ধ্যা ৭ টা ৪৩ বাজে। দীর্ঘক্ষণ বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বসে হাঁটাহাটি করছি। এমনি সময়ে সাউন্ডবক্সে নারীকন্ঠের সুললিত কন্ঠস্বর আমার বুকের কাঁপন বাঁড়িয়ে দিলো। আমি কোথাও যাচ্ছি না। যাওয়ার খুব বেশী জায়গা আমার নেই। বিশাল এই পৃথিবী আমার জন্য ছোট হয়ে গেছে কেমন করে তা আমি নিজেও ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। আজ দীপ্ত ভাইয়া আসছেন। সুদীপ্ত ভাইয়া! ফেসবুকে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। সপরিবারে মেলবোর্ন থেকে ঊড়ে এলেন । আমি যাত্রী বহির্গমন পথের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। 

বামহাত বুকের উপর একবার বুলিয়ে নিলাম। হার্টবিটটাকে পারলে চেপে ধরে থামাতাম। লাগেজ ঠেলে এগিয়ে আসছেন দীপ্ত ভাইয়া। পেছনে ভাবী। ফুটফুটে বাচ্চার হাত ধরে হাটছেন ভাইয়ার পিছে। অনেক দিন পরে দীপ্ত ভাইয়ের সাথে দেখা। দশ পনের বছর পরে দেখা হচ্ছে। কিছুটা মুটিয়ে গেছেন। বয়সের ছাপ কিছুটা পড়েছে কিন্তু চেহারা সেই আগের মতই আছে। সেই চোখ, চিরচেনা চোখ, যে চোখে ভাইয়া দেখিয়েছিলেন অন্য এক জগত।

আশপাশে অনেক মানুষ। সবাই এসেছে অভ্যাগতদের রিসিভ করতে। কারো ছেলে, কারো স্বামী। সবার চোখে মুখে উপচে পড়া আনন্দের ঢেউ। আবার অনেকেই এসেছে অফিশিয়ালি রিসিভ করতে। তাদের হাতে প্লাকার্ড। পাশে দাঁড়ানো ছেলেটার প্লাকার্ড হাতে কিছুটা নার্ভাস ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। ব্লেক নামের কাউকে রিসিভ করতে এসেছে। কিছু দূরে একজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে এক গোছা রজনীগন্ধা। বয়স ছাব্বিস সাতাশ এর কাছাকাছি। ফুলটুল আমার কিছু একটা আনা উচিত কিনা এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। দেখা যায় ছোট খাট বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আমাকে প্রায়ই হিমশিম খেতে হয়। 

gays life is always bounds with hate



দীপ্ত ভাইয়া আমার সামনে এসে গেছে কখন আমি টেরই পাইনি। কেমন আছিস? সেই চেনা কন্ঠস্বর। ফোনে শুনেছি। কিন্তু আজ সরাসরি শোনার পর বুকের ভেতর টা মোচড় দিয়ে উঠলো। কিছু একটা বুকের ভেতর থেকে দলা পাকিয়ে উঠে গলায় এসে বেঁধে গেলো। ইচ্ছে করছিলো দ্বীপ্ত ভাইয়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ি। কিন্তু অচেনা একটা লজ্জা আমাকে অনড় করে দিলো। আমি বোবা চাহনীতে সেই চেনা চোখের দিকে তাকালাম। লাগেজটা পাশে সরিয়ে রেখে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। সেই চেনা আলিঙ্গন। কিন্তু ভাবীর সামনে আমার আড়ষ্ঠ ভাব কিছুতেই কাটছিলো না। শুধু মনে হচ্ছিলো আমার শরীর থেকে ঘামের গন্ধ বের হচ্ছে নাতো। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে যে ঘামার সুযোগ ছিলো না সেটা কিন্তু মাথায় আসছে না। 

কোলাকুলি সেরে দীপ্ত ভাইয়া আবার জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছিস? মাথা নেড়ে জানালাম, ভালো আছি। 

-চশমা নিয়েছিস কবে? মাথার চুলগুলো কোথায়? সামনে এত ফাঁকা কেন? হেয়ার ট্রিটমেন্ট করাস না? বাড়ীর খবর কি? সজল এর কি খবর?

একরাশ প্রশ্ন করে গেলেন। যদিও এর অধিকাংশ উত্তর তিনি জানেন। ফেসবুকের এই যুগে আমরা অনেক দূরে থেকেও কাছে থাকি। আবার কাছের মানুষ থেকে দূরে থাকি নিজের অজান্তে। ফেসবুক যেমন দেয় তেমনি অনেক কিছু কেড়ে নেয়। ভাইয়ার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগেই ভাবী মুখ খুললেন। 

- মাস্টার মশাই , এখানে তোমার ভাইয়ার সাথে আরো কেউ আছে। আমাদের দিকে একটু তাকান প্লিজ। 

ভাবীকে ছবিতে দেখেছি। দীপ্ত ভাইয়ার বিয়ের অনুষ্ঠানে আমি যাইনি। সংগত কারনেই যাইনি। ভাবীকে এই প্রথম দেখলাম। ছবির থেকেও ভাবী অনেক সুন্দরী। এই বয়সে বাঙালী বধুরা মুটিয়ে যায়। মনে হয় একটা মাংসের স্তুপ। দুই বাঘে খেয়ে শেষ করতে পারবে না। মনে হচ্ছে ভাবী বেশ ফিগার সচেতন। ভাবীর কন্ঠস্বরে আন্তরিকতা মিশে আছে। খুব সহজেই ভাবীর সাথে ফ্রি হয়ে গেলাম। ভেবেছিলাম ভাবীর সাথে আমি সেভাবে কথা বলতে পারবো না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন