রাইলে ম্যাথিউ মসকাটেল, বয়স ১৭, আত্মহত্যার পূর্বে সে ইন্সটাগ্রামে একটি সুইসাইড নোট লিখে রাখে, ''আই এম আ প্রিজনার অফ মাই ওন বডি - আমি আমার নিজের দেহের একজন বন্দি।'' নোটটি প্রকাশের পরে সে তার বাড়ির নিকটে অবস্থিত রেল লাইনে গিয়ে দাঁড়ায়। চলন্ত ট্রেনের ধাক্কায় তার মৃত্যু ঘটে।
সমকামিতার অপরাধে ঘানায় এক ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ
ঘানায় সমকামী সন্দেহে ২১ বয়সী ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘানার উত্তরাঞ্চলের মামপ্রুসি জেলার ছোট্ট শহর ওয়ালেওয়ালে এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। পুলিশ কমান্ডার সাইমন পিটার সাংবাদিকদের জানান স্থানীয় অধিবাসীরা অভিযুক্তদের সম্পর্কে সমকামিতার সন্দেহ করে এবং মেরে ফেলার হুমকি দেয়। স্থানীয় মুসলিম শেখ মাহামুদ আল হাসান এই যুবকের মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেছে এবং তার বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণকে ক্রুসেডে (ধর্মযুদ্ধ) সামিল হতে প্ররোচিত করছে।
ঘানার অনলাইন সংবাদ পত্র Peacefmonline.com মেয়েদের পোষাক পরা হাত কড়া লাগানো এই যুবকের ছবি প্রকাশ করেছে। ঘানা সমকামিতার অপরাধে আইন তৈরী করেছে। সমকামিতার অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জেল সাজা দেয়া হয়।
ঘানার অনলাইন সংবাদ পত্র Peacefmonline.com মেয়েদের পোষাক পরা হাত কড়া লাগানো এই যুবকের ছবি প্রকাশ করেছে। ঘানা সমকামিতার অপরাধে আইন তৈরী করেছে। সমকামিতার অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জেল সাজা দেয়া হয়।
লাইফ উইদাউট লাভ-৪
মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো। হু বলে ডাক শুনে আমি পাশ ফিরে শুইলাম। মা আমার মুখের উপরের কম্বল সরিয়ে বললেন, কি রে ভূলে গেছিস? ঘাটে যাবি না?
- সকাল হয়ে গেছে?
- সেই কখন ফজরের আজান দিয়েছে। এতক্ষণে তো ঘাটে লঞ্চ এসে গেছে। তুই যাবি না রহিমকে একা পাঠিয়ে দেবো?
- বড় ভাইয়া আসছে আর আমি যাবো না তাই কি হয়। তুমি শার্টটা দাও।
শার্টটা গায়ে চাপিয়ে তার উপরে শাল চাপাতে হলো শাল খানা। বেশ ঠান্ডা। নিমের দাঁতন দিয়ে মেসওয়াক করতে করতে হাটা শুরু করলাম। আমার পিছে পিছে পা ফেলছে রহিম। রহিম আমার থেকে বছর দুয়েকের ছোট। কাজ কর্ম করার জন্য ওকে রাখা হয়েছে। বেশ হাসিখুশী প্রানচঞ্চল একটা ছেলে। বিকেলে মাঠ থেকে গরু আনার সময় খোলা মাঠে গলা ছেড়ে গান গায়। কেউ কোন কাজ করে দিতে বললে সানন্দে লেগে যায় সেই কাজে। সব কাজে সে মজা খুজে পায়। চারকূলে কেউ নেই তার।
- কিরে রহিম, স্যান্ডেল কই তোর? এই শীতে খালি পায়ে আইছিস ক্যান?
- ছোড ভাই, স্যান্ডেল পরলি পা কুটকুট করে। আমি হাঁট্টি পারিনে। খালি পায় হাট্টি আমার খুব ভালো লাগে। মিয়া ভাই ইবার কদিনের ছুটিতে আইলো?
- কথা না কয়ে পা ফেল। লঞ্চ মনে হয় ঘাটে চলে আইছে এতক্ষণে। আরো আগে বারুতে হইতো।
- না ভাই। এহনো আসে নাই। আসলি লঞ্চের গুড়গুড় শুনা যাতো।
আমাদের বাড়ী সুন্দরবনের খুব কাছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই অনুন্নত। বড় ভাইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পড়ছে। আমাদের এই এলাকায় ভাইয়াই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ছাত্র। গ্রামে বিএ পাশ কয়েকজন আছে। কিন্তু তারা সবাই খুলনার বিএল কলেজে পড়া। ঢাকা থেকে খুলনা আসার পর আইডব্লিউর ঘাট থেকে লঞ্চে করে আমাদের গ্রামে আসতে হয়। রাত দশটার লঞ্চে উঠলে আমাদের এখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সকাল হয়ে যায়। আর এখন শীতের সময়। কুঁয়াশার কারণে লঞ্চ খুব আস্তে চলে। অজেদ মোড়লের পুকুর পাড় দিয়ে যাওয়ার সময় নিমের দাঁতন ফেলে দিয়ে কুলি করে মুখ ধুয়ে নিলাম। পুকুরের চারপাশে অনেক উঁচু উঁচু গাছ। পুকুরে রোদ পড়ে না। তাই পানি বরফ ঠান্ডা হয়ে থাকে। গরম কালে এই পুকুরে গোছল করে মজা। মুখ ধুয়ে মোছার আগেই একরাশ ঠান্ডা হাওয়া আমার নাকের ডগা ছুয়ে উড়ে গেলো। সেই ঠান্ডায় হিড়হিড় করে কেঁপে উঠলাম।
লঞ্চ ঘাঁটে গিয়ে দেখি তখনো লঞ্চ আসে নাই। নদীর ওইপারে সুন্দরবন। ঘন সবুজের সমাহার। কিন্তু কুয়াশার চাঁদরে মোড়া। মিনিট পঞ্চাশেক বসার পরে লঞ্চের শব্দ শুনতে পেলাম। অপেক্ষার পর এই গুড়গুড় শব্দ কানে মধুর হয়ে উঠলো। আমি লঞ্চঘাটের উপর গিয়ে দাঁড়ালাম। শব্দ শোনার পর আরো মিনিট দশেক পর লঞ্চের দেখা পেলাম। মালপত্তর সহ ভাইয়াকে নামিয়ে নিলাম। ভাইয়ার সাথে তার এক দোস্ত এসেছে। সিনেমার নায়কদের মত দেখতে। মানুষ এত ফর্সা হয়? ফর্সা মানুষ আমি আগে দেখেছি কিন্তু এত ফর্সা আমি আগে দেখিনি। নিশ্চিত ফেয়ার এন্ড লাভলি মাখে রোজ দুইবেলা।
লাইফ উইদাউট লাভ-১
লাইফ উইদাউট লাভ- ২
লাইফ উইদাউট লাভ-৩
- সকাল হয়ে গেছে?
- সেই কখন ফজরের আজান দিয়েছে। এতক্ষণে তো ঘাটে লঞ্চ এসে গেছে। তুই যাবি না রহিমকে একা পাঠিয়ে দেবো?
- বড় ভাইয়া আসছে আর আমি যাবো না তাই কি হয়। তুমি শার্টটা দাও।
শার্টটা গায়ে চাপিয়ে তার উপরে শাল চাপাতে হলো শাল খানা। বেশ ঠান্ডা। নিমের দাঁতন দিয়ে মেসওয়াক করতে করতে হাটা শুরু করলাম। আমার পিছে পিছে পা ফেলছে রহিম। রহিম আমার থেকে বছর দুয়েকের ছোট। কাজ কর্ম করার জন্য ওকে রাখা হয়েছে। বেশ হাসিখুশী প্রানচঞ্চল একটা ছেলে। বিকেলে মাঠ থেকে গরু আনার সময় খোলা মাঠে গলা ছেড়ে গান গায়। কেউ কোন কাজ করে দিতে বললে সানন্দে লেগে যায় সেই কাজে। সব কাজে সে মজা খুজে পায়। চারকূলে কেউ নেই তার।
- কিরে রহিম, স্যান্ডেল কই তোর? এই শীতে খালি পায়ে আইছিস ক্যান?
- ছোড ভাই, স্যান্ডেল পরলি পা কুটকুট করে। আমি হাঁট্টি পারিনে। খালি পায় হাট্টি আমার খুব ভালো লাগে। মিয়া ভাই ইবার কদিনের ছুটিতে আইলো?
- কথা না কয়ে পা ফেল। লঞ্চ মনে হয় ঘাটে চলে আইছে এতক্ষণে। আরো আগে বারুতে হইতো।
- না ভাই। এহনো আসে নাই। আসলি লঞ্চের গুড়গুড় শুনা যাতো।
আমাদের বাড়ী সুন্দরবনের খুব কাছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই অনুন্নত। বড় ভাইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
লঞ্চ ঘাঁটে গিয়ে দেখি তখনো লঞ্চ আসে নাই। নদীর ওইপারে সুন্দরবন। ঘন সবুজের সমাহার। কিন্তু কুয়াশার চাঁদরে মোড়া। মিনিট পঞ্চাশেক বসার পরে লঞ্চের শব্দ শুনতে পেলাম। অপেক্ষার পর এই গুড়গুড় শব্দ কানে মধুর হয়ে উঠলো। আমি লঞ্চঘাটের উপর গিয়ে দাঁড়ালাম। শব্দ শোনার পর আরো মিনিট দশেক পর লঞ্চের দেখা পেলাম। মালপত্তর সহ ভাইয়াকে নামিয়ে নিলাম। ভাইয়ার সাথে তার এক দোস্ত এসেছে। সিনেমার নায়কদের মত দেখতে। মানুষ এত ফর্সা হয়? ফর্সা মানুষ আমি আগে দেখেছি কিন্তু এত ফর্সা আমি আগে দেখিনি। নিশ্চিত ফেয়ার এন্ড লাভলি মাখে রোজ দুইবেলা।
লাইফ উইদাউট লাভ-১
লাইফ উইদাউট লাভ- ২
লাইফ উইদাউট লাভ-৩
লাইফ উইদাউট লাভ-৩
আমি দুই রুমের ছোট্ট একটা ফ্লাট নিয়ে থাকি। এক রুমেই চলে যায়। বাকী রুমটা পড়ে থাকে। মাঝে মাঝে ভাবি সাবলেট দিয়ে দেবো। কিন্তু সেটা আর হয়ে ওঠে নি। আমি নিজে মোটামুটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করি। কিন্তু ফ্লাটটাকে পরিষ্কার রাখা হয়ে ওঠে না। ভাইয়া ভাবী রুমে ফ্রেশ হচ্ছে। আমি এরই মাঝে চুলায় চায়ের পানি বসিয়ে দিলাম। অনেকক্ষণ চা খাওয়া হয় না। আমার নিজেরও চা খাওয়া হয় না। আমি মোটামুটি নিজের রান্না করতে পারি। একদম খেয়াল ছিলো না তাদের আসার সাথে সাথে খাবার দিতে হবে। এই বেলা রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিয়ে আসি। বেরোতে যাবো এই সময়ে ভাবী এসে হাজির । কাপ ধুয়ে চা ঢেলে নিলেন।
- মাস্টার কোথায় যাও?
- এই তো ভাবী কিছু খাবার নিয়ে আসি।
- দেশে এসে দোকানের খাবার খাবো? এইটা কি বলো মাস্টার! ফ্রিজে বাজার করা না।
আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম। ভাবী তখনি কোমরে কাপড় জড়িয়ে ফ্রিজের দিকে এগিয়ে গেলেন।
- এত দূরের পথ জার্নি করে এসেছেন ভাবী। এখন থাক। খেয়েই দেখেন না ঢাকার রেস্টুরেন্টের খাবার।
- আরে রাখো তো তোমার জার্নি। এখন আর জার্নিকে জার্নি মনে হয় না। তুমি এসে আমাকে দেখিয়ে দাও কোথায় কি রাখো।
প্রেশার কুকারে মাংস চড়িয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলেন, মাস্টার বিয়ে করছো কবে? মাথার অবস্থা তো খারাপ। পুরোপুরি স্টেডিয়াম হয়ে গেলে তো মেয়ে পাবে না। মেয়ে দেখবো?
আমি কিছু বলার আগে দীপ্ত ভাইয়ার অট্টহাসির শব্দ পেলাম। তাকে একটু আগে চা দিয়ে এসেছি। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো, ঢেকি স্বর্গে গেলেও যেমন ধান ভাঙ্গে, তেমনি বাঙালী অবিবাহিত পাত্র পাত্রী পেলে বিনে পয়সায় ঘটকালী করে। মেলবোর্ণে তোর ভাবীকে সবাই ঘটক পাখি ভাবী বলে ডাকে। তিনি স্বেচ্ছাশ্রমে বেশ কয়েক যুগলের বিবাহ দিয়েছেন। ভাবী ভাইয়ার উপর কপট রাগ ঝাড়লেন। আজ অনেক দিন পর আমার ছোট্ট কিচেন গল্পে সরগরম হয়ে উঠলো। ছোট বেলায় এরকম হত। তখন আমাদের বাড়ীতে মাটির চুলায় রান্না হত। শীতকালে রান্না ঘরের সামনের উঠানে চুলা পাতা হত। সেখানে ধানের খড় দিয়ে রান্না চাপাতো মা। বাড়ি মামা খালা নানী ফুফুদের কেউ এলে চুলায় পিঠে বসে রাজ্যের সব গল্প হত।
ভাবী রান্না শেষ করে ঘরে গেলেন। দীপ্ত ভাইয়া বললেন, শার্টটা তোর কাছে আজো আছে? আমি আমার গায়ের শার্টটার দিকে তাকালাম। ভেবেছিলাম দীপ্ত ভাইয়া চিনতে পারবে না। আকাশ নীল বর্ণের এই শার্ট। আজ বহুবছর পরে আমি পরেছি।
লাইফ উইদাউট লাভ-১
লাইফ উইদাউট লাভ- ২
- মাস্টার কোথায় যাও?
- এই তো ভাবী কিছু খাবার নিয়ে আসি।
- দেশে এসে দোকানের খাবার খাবো? এইটা কি বলো মাস্টার! ফ্রিজে বাজার করা না।
আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম। ভাবী তখনি কোমরে কাপড় জড়িয়ে ফ্রিজের দিকে এগিয়ে গেলেন।
- এত দূরের পথ জার্নি করে এসেছেন ভাবী। এখন থাক। খেয়েই দেখেন না ঢাকার রেস্টুরেন্টের খাবার।
- আরে রাখো তো তোমার জার্নি। এখন আর জার্নিকে জার্নি মনে হয় না। তুমি এসে আমাকে দেখিয়ে দাও কোথায় কি রাখো।
প্রেশার কুকারে মাংস চড়িয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলেন, মাস্টার বিয়ে করছো কবে? মাথার অবস্থা তো খারাপ। পুরোপুরি স্টেডিয়াম হয়ে গেলে তো মেয়ে পাবে না। মেয়ে দেখবো?
আমি কিছু বলার আগে দীপ্ত ভাইয়ার অট্টহাসির শব্দ পেলাম। তাকে একটু আগে চা দিয়ে এসেছি। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো, ঢেকি স্বর্গে গেলেও যেমন ধান ভাঙ্গে, তেমনি বাঙালী অবিবাহিত পাত্র পাত্রী পেলে বিনে পয়সায় ঘটকালী করে। মেলবোর্ণে তোর ভাবীকে সবাই ঘটক পাখি ভাবী বলে ডাকে। তিনি স্বেচ্ছাশ্রমে বেশ কয়েক যুগলের বিবাহ দিয়েছেন। ভাবী ভাইয়ার উপর কপট রাগ ঝাড়লেন। আজ অনেক দিন পর আমার ছোট্ট কিচেন গল্পে সরগরম হয়ে উঠলো। ছোট বেলায় এরকম হত। তখন আমাদের বাড়ীতে মাটির চুলায় রান্না হত। শীতকালে রান্না ঘরের সামনের উঠানে চুলা পাতা হত। সেখানে ধানের খড় দিয়ে রান্না চাপাতো মা। বাড়ি মামা খালা নানী ফুফুদের কেউ এলে চুলায় পিঠে বসে রাজ্যের সব গল্প হত।
ভাবী রান্না শেষ করে ঘরে গেলেন। দীপ্ত ভাইয়া বললেন, শার্টটা তোর কাছে আজো আছে? আমি আমার গায়ের শার্টটার দিকে তাকালাম। ভেবেছিলাম দীপ্ত ভাইয়া চিনতে পারবে না। আকাশ নীল বর্ণের এই শার্ট। আজ বহুবছর পরে আমি পরেছি।
লাইফ উইদাউট লাভ-১
লাইফ উইদাউট লাভ- ২
লাইফ উইদাউট লাভ- ২
আমার নিজের গাড়ী নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরি করে গাড়ি কেনার সামর্থ্য এখনো হয়ে ওঠে নাই। লেকচারার হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেছি বছর দুয়েক। দীপ্ত ভাইয়া শোনার পর প্রথম দিন থেকেই আমাকে মাস্টার মশাই বলে ডাকা শুরু করেছেন। এখনো তাই ডাকেন।
ক্যাবে ভাইয়া আর ভাবী বসেছে পেছনে। আমি সামনে ড্রাইভারের পাশের সিটে। আমার কোলে দীপ্ত ভাইয়ার রাজপুত্র। অক্ষর, দীপ্ত ভাইয়ার ছেলের নাম। আমার গলা জড়িয়ে ধরে বসে রাজ্যের প্রশ্ন করে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ায় বাংলার চর্চা কতটা হয় আমার জানা নেই। তবে অক্ষরের মুখে বাংলার আধো টানটা কানে বেশ মধুর লাগছে। তার বাংলা উচ্চারণ ঝরঝরে কিন্তু ভোকাবুলারি অত সমৃদ্ধ নয়। প্রতি সেন্টেন্সে ইংরেজী অক্ষরের ছড়াছড়ি। আমি তার কচি মুখের দিকে অপলকে চেয়ে থাকি বেশ কিছুক্ষন। অন্য এক ভাবনা মাথায় আসে।
ভিউ গ্লাসে দেখলাম ভাবীও ঢাকা শহর দেখায় ব্যাস্ত। অনেক দিন পরে এসেছেন। অনেক কিছুই বদলে গেছে। তাই চেনা ঢাকাকে নতুন করে চেনার চেষ্টা করছেন। দীপ্ত ভাইয়ার চোখ ড্রাইভারের উপরের গ্লাসে। এভাবে কেন তাকাও দীপ্ত ভাইয়া! সময় অনেক পেরিয়ে গেছে। এই ঢাকার মহাসড়কের উপর দিয়ে পার হয়ে গেছে হাজারো মানুষ, হাজারো সব গল্প। ভাবী বেশ বিরক্তি নিয়ে বললেন, ঢাকার অনেক কিছুই চেঞ্জ হয়ে গেছে। পুরো রাস্তাটাই অচেনা লাগছে। কিন্তু জ্যামটা চেঞ্জ হলো না। সেই আগের মত রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা। তোমার ফ্লাটে পৌঁছাতে আর কতক্ষণ লাগবে মাস্টার। শীতের এই সন্ধ্যায় ঢাকার বুকে আজ হালকা উত্তাপ। আমার বুকের উত্তাপ কি আজ বাতাসের শরীরে গিয়ে মিশলো।
- আর বেশীক্ষণ না। আধাঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাবো। বোরিং লাগছে খুব?
- আধা ঘন্টা! ভ্যাপসা গরম ভাব লাগছে। ড্রাইভার এসি টা একটু বাড়িয়ে দাও ভাই। অনেক দিন পর এলাম তো।
দীপ্ত ভাইয়া শিস দিতে দিতে বললেন, কণা এত অস্থির হচ্ছো কেন? হাতে আমাদের অনেক সময়। পুরো একমাস এবার দেশে থাকবো আমরা। দেশে এসেছি। দেশের বাতাস টা একটু উপভোগ করতে দাও। পুরোনো সেই উত্তাপ। পুরাতন সেই আবেগ একটু চেখে দেখি।
গুনগুনিয়ে একটা সুর ভাঁজা শুরু করলেন, পুরোনো সেই দিনের কথা ভূলবি কিরে হায়!
হায়! রবীন্দ্রনাথ, অস্থির কিছু গান লিখে গেছো তুমি। আমার মনের সব কথা তুমি যেন আগে থেকেই পড়ে রেখেছিলে। আমার সব কথা খুঁজে পাই তোমার গানে। পুরোনো দিনের কথা আমি ভূলতে পারিনি কখনো। পুরোনো দিনের কথা গুলো প্রাণের ব্যাথাগুলো সন্তানের মত লালন করি নিজের মাঝে।
প্রথম পর্ব - লাইফ উইদাউট লাভ-১
ক্যাবে ভাইয়া আর ভাবী বসেছে পেছনে। আমি সামনে ড্রাইভারের পাশের সিটে। আমার কোলে দীপ্ত ভাইয়ার রাজপুত্র। অক্ষর, দীপ্ত ভাইয়ার ছেলের নাম। আমার গলা জড়িয়ে ধরে বসে রাজ্যের প্রশ্ন করে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ায় বাংলার চর্চা কতটা হয় আমার জানা নেই। তবে অক্ষরের মুখে বাংলার আধো টানটা কানে বেশ মধুর লাগছে। তার বাংলা উচ্চারণ ঝরঝরে কিন্তু ভোকাবুলারি অত সমৃদ্ধ নয়। প্রতি সেন্টেন্সে ইংরেজী অক্ষরের ছড়াছড়ি। আমি তার কচি মুখের দিকে অপলকে চেয়ে থাকি বেশ কিছুক্ষন। অন্য এক ভাবনা মাথায় আসে।
ভিউ গ্লাসে দেখলাম ভাবীও ঢাকা শহর দেখায় ব্যাস্ত। অনেক দিন পরে এসেছেন। অনেক কিছুই বদলে গেছে। তাই চেনা ঢাকাকে নতুন করে চেনার চেষ্টা করছেন। দীপ্ত ভাইয়ার চোখ ড্রাইভারের উপরের গ্লাসে। এভাবে কেন তাকাও দীপ্ত ভাইয়া! সময় অনেক পেরিয়ে গেছে। এই ঢাকার মহাসড়কের উপর দিয়ে পার হয়ে গেছে হাজারো মানুষ, হাজারো সব গল্প। ভাবী বেশ বিরক্তি নিয়ে বললেন, ঢাকার অনেক কিছুই চেঞ্জ হয়ে গেছে। পুরো রাস্তাটাই অচেনা লাগছে। কিন্তু জ্যামটা চেঞ্জ হলো না। সেই আগের মত রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা। তোমার ফ্লাটে পৌঁছাতে আর কতক্ষণ লাগবে মাস্টার। শীতের এই সন্ধ্যায় ঢাকার বুকে আজ হালকা উত্তাপ। আমার বুকের উত্তাপ কি আজ বাতাসের শরীরে গিয়ে মিশলো।
- আর বেশীক্ষণ না। আধাঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাবো। বোরিং লাগছে খুব?
- আধা ঘন্টা! ভ্যাপসা গরম ভাব লাগছে। ড্রাইভার এসি টা একটু বাড়িয়ে দাও ভাই। অনেক দিন পর এলাম তো।
দীপ্ত ভাইয়া শিস দিতে দিতে বললেন, কণা এত অস্থির হচ্ছো কেন? হাতে আমাদের অনেক সময়। পুরো একমাস এবার দেশে থাকবো আমরা। দেশে এসেছি। দেশের বাতাস টা একটু উপভোগ করতে দাও। পুরোনো সেই উত্তাপ। পুরাতন সেই আবেগ একটু চেখে দেখি।
গুনগুনিয়ে একটা সুর ভাঁজা শুরু করলেন, পুরোনো সেই দিনের কথা ভূলবি কিরে হায়!
হায়! রবীন্দ্রনাথ, অস্থির কিছু গান লিখে গেছো তুমি। আমার মনের সব কথা তুমি যেন আগে থেকেই পড়ে রেখেছিলে। আমার সব কথা খুঁজে পাই তোমার গানে। পুরোনো দিনের কথা আমি ভূলতে পারিনি কখনো। পুরোনো দিনের কথা গুলো প্রাণের ব্যাথাগুলো সন্তানের মত লালন করি নিজের মাঝে।
প্রথম পর্ব - লাইফ উইদাউট লাভ-১
লাইফ উইদাউট লাভ-১
৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ঢাকা বিমান বন্দর।
সন্ধ্যা ৭ টা ৪৩ বাজে। দীর্ঘক্ষণ বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বসে হাঁটাহাটি করছি। এমনি সময়ে সাউন্ডবক্সে নারীকন্ঠের সুললিত কন্ঠস্বর আমার বুকের কাঁপন বাঁড়িয়ে দিলো। আমি কোথাও যাচ্ছি না। যাওয়ার খুব বেশী জায়গা আমার নেই। বিশাল এই পৃথিবী আমার জন্য ছোট হয়ে গেছে কেমন করে তা আমি নিজেও ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। আজ দীপ্ত ভাইয়া আসছেন। সুদীপ্ত ভাইয়া! ফেসবুকে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। সপরিবারে মেলবোর্ন থেকে ঊড়ে এলেন । আমি যাত্রী বহির্গমন পথের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
বামহাত বুকের উপর একবার বুলিয়ে নিলাম। হার্টবিটটাকে পারলে চেপে ধরে থামাতাম। লাগেজ ঠেলে এগিয়ে আসছেন দীপ্ত ভাইয়া। পেছনে ভাবী। ফুটফুটে বাচ্চার হাত ধরে হাটছেন ভাইয়ার পিছে। অনেক দিন পরে দীপ্ত ভাইয়ের সাথে দেখা। দশ পনের বছর পরে দেখা হচ্ছে। কিছুটা মুটিয়ে গেছেন। বয়সের ছাপ কিছুটা পড়েছে কিন্তু চেহারা সেই আগের মতই আছে। সেই চোখ, চিরচেনা চোখ, যে চোখে ভাইয়া দেখিয়েছিলেন অন্য এক জগত।
আশপাশে অনেক মানুষ। সবাই এসেছে অভ্যাগতদের রিসিভ করতে। কারো ছেলে, কারো স্বামী। সবার চোখে মুখে উপচে পড়া আনন্দের ঢেউ। আবার অনেকেই এসেছে অফিশিয়ালি রিসিভ করতে। তাদের হাতে প্লাকার্ড। পাশে দাঁড়ানো ছেলেটার প্লাকার্ড হাতে কিছুটা নার্ভাস ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। ব্লেক নামের কাউকে রিসিভ করতে এসেছে। কিছু দূরে একজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে এক গোছা রজনীগন্ধা। বয়স ছাব্বিস সাতাশ এর কাছাকাছি। ফুলটুল আমার কিছু একটা আনা উচিত কিনা এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। দেখা যায় ছোট খাট বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আমাকে প্রায়ই হিমশিম খেতে হয়।
দীপ্ত ভাইয়া আমার সামনে এসে গেছে কখন আমি টেরই পাইনি। কেমন আছিস? সেই চেনা কন্ঠস্বর। ফোনে শুনেছি। কিন্তু আজ সরাসরি শোনার পর বুকের ভেতর টা মোচড় দিয়ে উঠলো। কিছু একটা বুকের ভেতর থেকে দলা পাকিয়ে উঠে গলায় এসে বেঁধে গেলো। ইচ্ছে করছিলো দ্বীপ্ত ভাইয়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ি। কিন্তু অচেনা একটা লজ্জা আমাকে অনড় করে দিলো। আমি বোবা চাহনীতে সেই চেনা চোখের দিকে তাকালাম। লাগেজটা পাশে সরিয়ে রেখে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। সেই চেনা আলিঙ্গন। কিন্তু ভাবীর সামনে আমার আড়ষ্ঠ ভাব কিছুতেই কাটছিলো না। শুধু মনে হচ্ছিলো আমার শরীর থেকে ঘামের গন্ধ বের হচ্ছে নাতো। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে যে ঘামার সুযোগ ছিলো না সেটা কিন্তু মাথায় আসছে না।
কোলাকুলি সেরে দীপ্ত ভাইয়া আবার জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছিস? মাথা নেড়ে জানালাম, ভালো আছি।
-চশমা নিয়েছিস কবে? মাথার চুলগুলো কোথায়? সামনে এত ফাঁকা কেন? হেয়ার ট্রিটমেন্ট করাস না? বাড়ীর খবর কি? সজল এর কি খবর?
একরাশ প্রশ্ন করে গেলেন। যদিও এর অধিকাংশ উত্তর তিনি জানেন। ফেসবুকের এই যুগে আমরা অনেক দূরে থেকেও কাছে থাকি। আবার কাছের মানুষ থেকে দূরে থাকি নিজের অজান্তে। ফেসবুক যেমন দেয় তেমনি অনেক কিছু কেড়ে নেয়। ভাইয়ার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগেই ভাবী মুখ খুললেন।
- মাস্টার মশাই , এখানে তোমার ভাইয়ার সাথে আরো কেউ আছে। আমাদের দিকে একটু তাকান প্লিজ।
ভাবীকে ছবিতে দেখেছি। দীপ্ত ভাইয়ার বিয়ের অনুষ্ঠানে আমি যাইনি। সংগত কারনেই যাইনি। ভাবীকে এই প্রথম দেখলাম। ছবির থেকেও ভাবী অনেক সুন্দরী। এই বয়সে বাঙালী বধুরা মুটিয়ে যায়। মনে হয় একটা মাংসের স্তুপ। দুই বাঘে খেয়ে শেষ করতে পারবে না। মনে হচ্ছে ভাবী বেশ ফিগার সচেতন। ভাবীর কন্ঠস্বরে আন্তরিকতা মিশে আছে। খুব সহজেই ভাবীর সাথে ফ্রি হয়ে গেলাম। ভেবেছিলাম ভাবীর সাথে আমি সেভাবে কথা বলতে পারবো না।
সন্ধ্যা ৭ টা ৪৩ বাজে। দীর্ঘক্ষণ বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বসে হাঁটাহাটি করছি। এমনি সময়ে সাউন্ডবক্সে নারীকন্ঠের সুললিত কন্ঠস্বর আমার বুকের কাঁপন বাঁড়িয়ে দিলো। আমি কোথাও যাচ্ছি না। যাওয়ার খুব বেশী জায়গা আমার নেই। বিশাল এই পৃথিবী আমার জন্য ছোট হয়ে গেছে কেমন করে তা আমি নিজেও ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। আজ দীপ্ত ভাইয়া আসছেন। সুদীপ্ত ভাইয়া! ফেসবুকে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। সপরিবারে মেলবোর্ন থেকে ঊড়ে এলেন । আমি যাত্রী বহির্গমন পথের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
বামহাত বুকের উপর একবার বুলিয়ে নিলাম। হার্টবিটটাকে পারলে চেপে ধরে থামাতাম। লাগেজ ঠেলে এগিয়ে আসছেন দীপ্ত ভাইয়া। পেছনে ভাবী। ফুটফুটে বাচ্চার হাত ধরে হাটছেন ভাইয়ার পিছে। অনেক দিন পরে দীপ্ত ভাইয়ের সাথে দেখা। দশ পনের বছর পরে দেখা হচ্ছে। কিছুটা মুটিয়ে গেছেন। বয়সের ছাপ কিছুটা পড়েছে কিন্তু চেহারা সেই আগের মতই আছে। সেই চোখ, চিরচেনা চোখ, যে চোখে ভাইয়া দেখিয়েছিলেন অন্য এক জগত।
আশপাশে অনেক মানুষ। সবাই এসেছে অভ্যাগতদের রিসিভ করতে। কারো ছেলে, কারো স্বামী। সবার চোখে মুখে উপচে পড়া আনন্দের ঢেউ। আবার অনেকেই এসেছে অফিশিয়ালি রিসিভ করতে। তাদের হাতে প্লাকার্ড। পাশে দাঁড়ানো ছেলেটার প্লাকার্ড হাতে কিছুটা নার্ভাস ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। ব্লেক নামের কাউকে রিসিভ করতে এসেছে। কিছু দূরে একজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে এক গোছা রজনীগন্ধা। বয়স ছাব্বিস সাতাশ এর কাছাকাছি। ফুলটুল আমার কিছু একটা আনা উচিত কিনা এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। দেখা যায় ছোট খাট বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আমাকে প্রায়ই হিমশিম খেতে হয়।
দীপ্ত ভাইয়া আমার সামনে এসে গেছে কখন আমি টেরই পাইনি। কেমন আছিস? সেই চেনা কন্ঠস্বর। ফোনে শুনেছি। কিন্তু আজ সরাসরি শোনার পর বুকের ভেতর টা মোচড় দিয়ে উঠলো। কিছু একটা বুকের ভেতর থেকে দলা পাকিয়ে উঠে গলায় এসে বেঁধে গেলো। ইচ্ছে করছিলো দ্বীপ্ত ভাইয়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ি। কিন্তু অচেনা একটা লজ্জা আমাকে অনড় করে দিলো। আমি বোবা চাহনীতে সেই চেনা চোখের দিকে তাকালাম। লাগেজটা পাশে সরিয়ে রেখে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। সেই চেনা আলিঙ্গন। কিন্তু ভাবীর সামনে আমার আড়ষ্ঠ ভাব কিছুতেই কাটছিলো না। শুধু মনে হচ্ছিলো আমার শরীর থেকে ঘামের গন্ধ বের হচ্ছে নাতো। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে যে ঘামার সুযোগ ছিলো না সেটা কিন্তু মাথায় আসছে না।
কোলাকুলি সেরে দীপ্ত ভাইয়া আবার জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছিস? মাথা নেড়ে জানালাম, ভালো আছি।
-চশমা নিয়েছিস কবে? মাথার চুলগুলো কোথায়? সামনে এত ফাঁকা কেন? হেয়ার ট্রিটমেন্ট করাস না? বাড়ীর খবর কি? সজল এর কি খবর?
একরাশ প্রশ্ন করে গেলেন। যদিও এর অধিকাংশ উত্তর তিনি জানেন। ফেসবুকের এই যুগে আমরা অনেক দূরে থেকেও কাছে থাকি। আবার কাছের মানুষ থেকে দূরে থাকি নিজের অজান্তে। ফেসবুক যেমন দেয় তেমনি অনেক কিছু কেড়ে নেয়। ভাইয়ার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগেই ভাবী মুখ খুললেন।
- মাস্টার মশাই , এখানে তোমার ভাইয়ার সাথে আরো কেউ আছে। আমাদের দিকে একটু তাকান প্লিজ।
ভাবীকে ছবিতে দেখেছি। দীপ্ত ভাইয়ার বিয়ের অনুষ্ঠানে আমি যাইনি। সংগত কারনেই যাইনি। ভাবীকে এই প্রথম দেখলাম। ছবির থেকেও ভাবী অনেক সুন্দরী। এই বয়সে বাঙালী বধুরা মুটিয়ে যায়। মনে হয় একটা মাংসের স্তুপ। দুই বাঘে খেয়ে শেষ করতে পারবে না। মনে হচ্ছে ভাবী বেশ ফিগার সচেতন। ভাবীর কন্ঠস্বরে আন্তরিকতা মিশে আছে। খুব সহজেই ভাবীর সাথে ফ্রি হয়ে গেলাম। ভেবেছিলাম ভাবীর সাথে আমি সেভাবে কথা বলতে পারবো না।
সমকামি চলচিত্র সাগুন।
ফিলিপাইনের তাতালান গ্রাম। সমুদ্র তীরবর্তী এই গ্রামটির অধিকাংশ যুবক টুরিস্টদের জন্য নৌকা চালায়। হাড়ভাঙা পরিশ্রম। উত্তাল সমুদ্রের সাথে যুদ্ধে তারা তারা ঢেউকে পরাজিত করতে পারে কিন্তু জীবনের যাঁতাকল থেকে অর্থের অভাবকে দূর করতে পারে না। অর্থের অভাবে পড়ে অনেক যুবকই টুরিস্টদের সাথে যৌন মিলনে রাজি হয়। আমরা যেটাকে সহজ ভাষার বলি পতিতাবৃত্তি। জীবনের এই অপ্রিয় সত্যের মুখোমুখি হয় বোট চালক হিসেবে নতুন আসা এক যুবক। নাম আলফ্রেড। আলফ্রেডের কাহিনিই হলো সাগুন। আলফ্রেড নিজেকে গর্বিত মনে করে কারন আজ পর্যন্ত নিজের আর্থিক দৈন্যতায় তাকে কোন টুরিস্টের সাথে তার অন্যান্য বন্ধু এবং সহকর্মী যুবকদের মত কোন অনৈতিক যৌন মিলনে মিলিত হতে হয়নি। কিন্তু একসময় চতুর্দিকের চাপ তাকে সিদ্ধান্তহীনতায় ফেলে দেয় এই ব্যাপারে
।
সমকামিতা
প্রাণীজগতে সহস্রাধিক প্রজাতিতে যে সমকামিতার অস্তিত্ব
রয়েছে তা এখন অনেকেই জানেন। মানব সভ্যতাও কিন্তু এই ধারার ব্যতিক্রম নয়। প্রাচীন
ইতিহাস থেকে মানুষের মাঝে সমকামিতার অস্তিত্ব ছিল। এটা মোটেও একুশ শতকের কোন বিষয়
নয়। সমকামীতার ইতিহাস অনেক পুরাতন। পৃথিবীর প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাসগুলোর মধ্যে ইসলাম
জোরদার ভাবে সমকামীতাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। পবিত্র আল কুরআনে বলা হয়েছে আদ ও
সামুদ এবং লূত (আঃ) এর কওম (বংশ) কে ধ্বংস করে দেওয়া হয় সমকামিতার অপরাধে। তারপরেও
মানবজাতির লিখিত ইতিহাসের সমগ্র সময়কাল জুড়ে সমকামী সম্পর্ক বা আচরণ একাধারে
নন্দিত ও নিন্দিত হয়ে এসেছে।
**সমকামিতা কিঃ
সমকামিতা একটি যৌন প্রবৃত্তি, যার দ্বারা সমলিঙ্গের দুই ব্যক্তির মধ্যে প্রেম কিংবা যৌন আচরণ বোঝায়। প্রবৃত্তি হিসেবে, সমকামিতা বলতে বোঝায় মূলত সমলিঙ্গের কোনো ব্যক্তির প্রতি জেগে ওঠা "এক যৌন, স্নেহ বা প্রণয়ঘটিত এক ধরনের স্থায়ী স্বাভাবিক প্রবণতা"; "এছাড়া এর দ্বারা এই ধরনের সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ব্যক্তিগত বা সামাজিক পরিচিতি, এই ধরনের আচরণ এবং সমজাতীয় ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত এক সম্প্রদায়ের সদস্যতাও নির্দেশিত হয়।
**সমকামিতা শব্দের মূলঃ
সমকামিতা শব্দটি বিশেষ্য। এটা এসেছে মুলতঃ বিশেষণ সমকামী। ভাশাগত দিক থেকে সম মানে একই এবং কামী মানে বাসনাকারী। তাই সমকামী শব্দটির অথ দাড়াচ্ছে একই রকম বাসনাকারী। কিন্তু প্রয়োগগত অথ ভিন্ন। সমকামী শব্দটির মূল সংস্কৃত সমকামিন। মূল ধাতুর সাথে ইন প্রত্যয়যোগে গঠিত হয়েছে সমকামিন (সম+কাম+ইন) যার অথ যে ব্যক্তি সমলৈঙ্গিক ব্যক্তির প্রতি যৌন আকরষণ বোধ করে। প্রাচীন কালে সমকামীদের বোঝাতে ঔপরিস্টক শব্দটি ব্যবহৃত হত। বাতস্যায়নের কামসুত্রের ষষ্ঠ অধিকরণের নবম অধ্যায়ে ঔপরিস্টক শব্দটির ব্যবহার দেখা যায়।
সমকামিতার ইংরেজী প্রতি শব্দ হোমোসেক্সুয়ালিটি, যা ১৮৬৯সালে প্রথম ব্যবহার করেন Karl Maria Cutberry তার লেখা ছোট একটি আইনি পুস্তিকায়। Homosexual শব্দটি গ্রীক হোমো এবং ল্যাটিন সেক্সাস শব্দের সমন্বয়ে গঠিত।
বাংলাদেশ মোটামুটি রক্ষণশীল দেশ। এখানে সমকামিতা নিয়ে কথা বললে বিতরকো হবে। বাঙ্গালীরা সাধারনতঃ সমকামিতা নিয়ে কথা বলতে ইতস্তত বোধ করি। বাঙ্গালী লেখকদের মধ্যে ডাঃ লুতফর রহমান প্রথম সমকামিতার খারাপ দিক তুলে ধরেন তার যুবক জীবনবইয়ে। সেখানে তিনি ছোট একটি ঘটনার পরিসরে দেখান যে কিভাবে একজন উঠতি তরুন তার গৃহশিক্ষকের দ্বারা সমকামী জীবনে ঢুকে নিজের জীবনকে অস্থিতিশীল করে তোলে।
*প্রাচীন ইতিহাসে সমকামিতাঃ
আজকালকার শিক্ষিতদের অনেকের মুখে বলতে শোনা যায় সমকামিতা একুশ শতকের কোন বিষয়, কলিযুগের পাপ। কিন্তু প্রাচীন ইতিহাসে সমকামিতার উদাহরন খুঁজে পেলাম। প্রাচীন গ্রীসের পুরাণ আর ধর্ম শাস্ত্রগুলোতে সমকামী স্পৃহার উল্লেখ দেখা যায়।সমকামীদের কামনার দেবি ছিল ভেনাস। শুক্র গ্রহের ইংরেজী নাম ভেনাস যা ভেনাস দেবীর নামে নামকরণ করা হয়। বাংলায় যাকে আমরা সুখ তারা বা সন্ধ্যাতারা নামে চিনি। আমি অবাক হয়ে খেয়াল করছি বাংলায় কেন এই গ্রহটার নাম রাখা হল শুক্র। শুক্র হল পুরুষের বীর্য। আর সমকামীরাই উপাসনা করে এই গ্রহের। একটা আদি মিলের সন্ধান দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ওইতিহাসিক প্রমান না থাকায় আমি সেদিকে যাচ্ছি না। প্রিয়াপাস বলে সমকামীদের আরাধ্য আরেকজন দেবতা ছিল প্রাচীন গ্রিসে। এশিয়া মাইনর থেকে গাল্লিদের হাত ধরে সিবিলি পূজা পারস্যে সংক্রমিত হয়। আজকের ইরান হচ্ছে সেই পারস্য। তারপর ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তে।
ইসলামের আবির্ভাবের যুগে আরব সমাজে ব্যাপকভাবে সমকামিতার প্রচলন ছিল। সে যুগটা আসলেই অন্ধকার যুগ ছিল। তবে সমকামিতার থেকে শিশু কামিতার প্রচলন ছিল বেশী। এই আরবদের বশে আনতে কি ইসলামে হুরের পাশাপাশি গেলমানের কথা বলা হয়েছে?
আরব্য কবিদের কবিতায় সাকী শব্দটার যথেচ্ছ ব্যবহার হত। আমাদের জাতীয় কবি নজরুলের কবিতার সাকী ও সূরার ব্যবহার প্রথম শুনি। আমি ভাবতাম সাকী মানে মদ বা এলকোহল। কিন্তু সুরা মানেই হচ্ছে মদ। আর সাকী মানে হচ্ছে মদ পরিবেষণকারী সুন্দর রমনী, বালিকা ও বালক। সুন্দর লাস্যময় কোমল সেই বালক দের কাজ শুধু পান পাত্রে মদ ঢেলে দেওয়া ছিলনা। সে সাথে মালিকের জৈবিক চাহিদা পুরনে তাদের শয্যাসঙ্গী হতে হত।
তাহিতির বিভিন্ন জায়গায় এমন কিছু মূর্তি পাওয়া গেছে যেগুলোতে দুজন পুরুষের যৌনমিলন দেখা যায়। আনাতোলিয়া, গ্রিস, রোমের বিভিন্ন মন্দিরে সিবিলি ও ডাইওনিসস এর পূজা হত। সিবিলির পুরোহিতরা মেয়েদের মত লম্বা চুল রাখত। এদের নাম ছিল গাল্লি। ধারণা করা হয় গাল্লিদের মাঝে ব্যাপক সমকামিতার প্রচলন ছিল। গ্রীক, রোমান, চৈনিক, পাপুয়া নিউগিনী এবং উত্তর আমেরিকার সভ্যতাগুলোতে এরকম অনেক উদাহরন আছে যা সেই সময়ে সমকামিতার উপস্থিতি প্রমাণ করে।
হিন্দু শাস্ত্র পূরাণে পুরুষীনি বা তৃতীয় প্রকৃতি বলে উল্লেখ আছে যা দ্বারা উভকামিতা বা সমকামিতাকেই বোঝানো হয়েছে। গুজরাটের শংখলপুরে বহুচোরা মাতার যে প্রতিমা আছে সেটা দেখতে অনেকটা সিবিলির মত। তবে কি গাল্লিদের সিবিলি পূজা পারস্য হয়ে প্রাচীন ভারতে প্রবেশ করেছিল।
*মূঘল বংশে সমকামিতাঃ
বাবর একজন গোঁড়া সুন্নি মুসলিম ছিল। সে তার শিয়া মুসলিমদের অপছন্দ করাকে কখনও কখনও ব্যক্ত করেছিল " তাদের বিচ্যুতি " বলে ।যদিও ধর্ম বাবরের জীবনের এক প্রধান স্থান ছিল এবং তার সহযোগী রাজারা ইসলামকে হালকা ভাবে গ্রহণ করেছিল। বাবর তার সমকালীন এক কবির কবিতার একটি লাইন প্রায় উদ্ধৃত করতেন:" আমি মাতাল, আধিকারিক।আমাকে শাস্তি দিন যখন আমি সংযমি। " বাবরের সহযোগী রাজারা মদ পান করতেন এবং প্রাচুর্য্য পূর্ণ ভাবে জীবন যাপন করতেন, তারা বাজারের ছেলের সঙ্গে প্রেমে পড়েছিল এবং তারা হিংস্র এবং নির্মম ছিলেন।
বাবরের এক কাকার মতে "অধর্ম এবং পাপকার্জে সে আসক্ত হয়েছিল। সে সমকামিতেও আসক্ত হয়ে পড়েছিল। তার এলাকাতে, যখনই শান্ত কোনো যুবক তার সামনে এসেছে, তাকে পাবার জন্য সে সবকিছু সে করেছিল। তার সময় এই ধরনের সমকামিতা প্রচলিত ছিল এবং সেটা একটি গুণহিসাবে বিবেচনা করা হোতো। । " সে তার মৃত্যূর দুই বছর আগে সুরাপান ত্যাগ করেছিলেন এবং তিনি তার রাজসভায় সকলকে একই কাজ করার দাবী করেছিলেন। কিন্তু সে নিজে আফিং এর নেশা ছাড়তে পারেননি।এবং তার কি বোধ হারানি। বাবর লিখেছিলেন: " সবাই সুরাপান পছন্দ করে ,পান করার জন্য শপথ নেয়,আমি শপথ নিয়েছিলাম এবং অনুতাপ করেছিলাম।
*আজকের ভারতে সমকামিতাঃ
পৃথিবীর অনেক দেশ এখন সমকামিতাকে কে সামাজিক স্বীকৃতি দিচ্ছে তার মানে এই নয় যে এটা সব দেশেই স্বীকৃতি পাবার মত কোন বিষয়। কিন্তু সমকামিতা বিষয়টি পুরোপুরি উপেক্ষা করার মত নয়। আমাদের পাশের দেশ ভারতের সিনেমা গুলোতে এখন সম বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে। যেমন দস্তানা। যদিও ওই সিনেমাটিতে বিষয়টিকে দুই বন্ধু আর তাদের বান্ধবীর মাঝে মজা হিসেবে দেখানো হয়েছে। বলিউডের আরেকটি ছবি আই লাভ ইউ বেবী তে লেসবিয়ান বা নারী সমকামীর কাহিনী স্পস্টভাবে ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে। আরো কিছু ছবি যেমন গোলমাল টু তে সমকামিতা কে দেখানো হয়েছে ফান হিসেবে। তবে সমকামিতার নিরিখে দস্তানা প্রচার পেয়েছে বেশী।
সমকামিতা সাধারণত ভারতীয় নাগরিক সমাজ ও সরকারের কাছে একটি নিষিদ্ধ বিষয়। ভারতে সমকামিতা নিয়ে সাধারণ আলোচনার সুযোগ কম। তার কারণ যৌনতা সংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়েই ভারতে খোলামেলা আলোচনা হয় না। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সমকামিতার প্রতি ভারতীয়দের মনোভাবে কিছু পরিবর্তন লক্ষিত হয়েছে। বিশেষত, ভারতের সংবাদমাধ্যম ও বলিউডে সমকামিতার প্রদর্শন ও আলোচনার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ সালের ২ জুলাই, দিল্লি হাইকোর্টের একটি রায়ে স্পষ্টত জানানো হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সম্মতিক্রমে সমকামিতার আচরণ অপরাধের আওতায় পড়ে না। এই রায়ে আরো বলা হয়েছে যে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার রক্ষা নীতির পরিপন্থী।
ভারতে প্রথা ও রীতিনীতির ক্ষেত্রে ধর্মের ভূমিকা অপরিসীম। ভারতের বৃহত্তম ধর্ম হিন্দুধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলিতে সমকামিতার সুস্পষ্ট উল্লেখ না থাকলেও, ধর্মগ্রন্থের কোনো কোনো ব্যাখ্যাকে সমকামিতার বিরোধী মনে করা হয়। তবে ভারতের প্রধান ধর্মবিশ্বাসে সমকামিতার অবস্থান কোথায়, তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে দ্বিমত আছে। কেউ কেউ মনে করেন প্রাচীন হিন্দু সমাজে সমকামিতা শুধু প্রাসঙ্গিকই ছিল না, বরং তা গ্রহণীয়ও ছিল।
সমকামিতা কি মানসিক সমস্যা???????
ডাক্তারী বিদ্যা বা Medical Science একসময় সমকামিতাকে মানসিক অসুস্থতা হিসেবে অভিহিত করত। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান প্রমান করতে সক্ষম হয়েছে যে সমকামিতা বিষয়টি জেনেটিক কোডিং এর কারনে হয়। একটি সফটয়্যারকে যে ভাবে কোডিং করা হয় সেভাবেই সে কাজ করে। তেমনি একটি মানুষের জিন কে যে ভাবে কোডিং বা ডিএনএ বিন্যস্ত করা হয় সে সেরকমই বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। এখানে মানুষের কোন হাত নাই। সব জীবিত প্রানীর বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয় জেনেটিক কোডিং দ্বারা। তাই প্রকৃত সমকামী ব্যাক্তিকে আমি দোষ দেই না। আসলে তার নিজের কিছু করার থাকে না। সে প্রকৃতির রহস্যময়তার শিকার। কিন্তু আমি বাইসেক্সুয়াল দের ছাড় দিতে রাজি নই। তারাই মূলত আসল পাপী। তারা তো বিয়ে করেন, তাদের সন্তান হয়। আজ থেকে যদি বিশ-পঁচিশ বছর পরে আপনার ছেলে যদি আপনাকে বলে, “বাবা আমি সমকামী। আমি মেয়েদের নয় পুরুষদেরকে পছন্দ করি। আমি একটি ছেলের সাথে জীবন কাটাতে চাই, তাকে বিয়ে করতে চাই।” পারবেন মেনে নিতে ছেলের আবদার। যদি পারেন তাহলে তো কথাই নাই। বাপকা বেটা। আর যদি না পারেন তাহলে আপনার কি অধিকার সমকামিতা করার?
বিজ্ঞানীরা আজ মেনে নিয়েছেন যে, শুধু মানুষের মধ্যে নয় সব প্রানীর মধ্যেই সমকামিতার অস্তিত্ব আছে। কাজেই সমকামিতা প্রকৃতিজগতের একটি বাস্তবতা। আরো জানা গিয়েছে যে, সমকামিতার ব্যাপারটা কোন জেনেটিক ডিফেক্ট নয়। একটা সময় সমকামিতাকে স্রেফ মনোরোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হত। চিকিৎসকেরা বিভিন্ন থেরাপি দিয়ে তাদের চিকিৎসা করতেন। এর মধ্যে শারিরীক নির্যাতন, শক থেরাপি, বমি থেরাপি সব কিছুই ছিলো, কিছু ক্ষেত্রে জোর করে এদের আচরণ পরিবর্তন করলেও পরে দেখা গেছে অধিকাংশই আবার তারা সমকামিতায় ফিরে যায়। এ ধরনের অসংখ্য নথিবদ্ধ দলিল আছে। আসলে বহু ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে যাবার পর ডাক্তাররা এবং অন্যান্য অনেকেই আজ মেনে নিয়েছেন, সমকামিতা যৌনতার একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। সেজন্যই কিন্তু ১৯৭৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বর আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন বিজ্ঞানসম্মত আলোচনার মাধ্যমে একমত হন যে সমকামিতা কোন নোংরা ব্যাপার নয়, নয় কোন মানসিক ব্যধি। এ হল যৌনতার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি।
১৯৭৫ সালে আমেরিকান সাইকোলজিকাল এসোসিয়েশন একইরকম অধ্যাদেশ প্রদান করে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন ১৯৮১ সালে সমকামিতাকে মানসিক রোগের তালিকা থেকে অব্যহতি দেয়। আমেরিকান ল ইন্সটিটিউট তাদের মডেল পেনাল কোড সংশোধন করে উল্লেখ করে –‘ কারো ব্যক্তিগত যৌন আসক্তি এবং প্রবৃত্তিকে অপরাধের তালিকা হতে বাদ দেয়া হল’। আমেরিকান বার এসোসিয়েশন ১৯৭৪ সালে এই মডেল পেনাল কোডের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে সমকামিতাকে সামাজিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করে। এর ফলে সমকামীরা পায় অপরাধবোধ থেকে মুক্তি।
আমেরিকান ১৯৯৪ সালে আমেরিকান সাইকোলজিকাল এসোসিয়েশন তাদের ‘স্টেটমেন্ট অন হোমোসেক্সুয়ালিটি’ শিরোনামের একটি ঘোষণাপত্রে সমকামিতাকে একটি স্বাভাবিক যৌনপ্রবৃত্তি হিসেবে উল্লেখ করে এবং কারো যৌনপ্রবৃত্তিকে পরিবর্তন করার যে কোন প্রচেষ্টাকে অনৈতিক বলে উল্লেখ করা হয়। আমেরিকান মেডিকেল এসোসিয়েশন ১৯৯৪ সালের একটি রিপোর্টে সমকামিতাকে স্বাভাবিক যৌনপ্রবৃত্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, এবং অভিমত ব্যক্ত করে যে, সমকামীদের যৌনতার প্রবৃত্তি পরিবর্তনের চেষ্টা না করে বরং তারা যেন সমাজে ভালভাবে বেঁচে থাকতে পারে আমাদের সেই চেষ্টা করা উচিৎ।
একাডেমী অব পেডিইয়াট্রিক্স এবং কাউন্সিল অব চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট হেলথ স্পষ্ট করেই বলে যে সমকামিতা কোন চয়েস বা পছন্দের ব্যাপার নয়, এবং এই প্রবৃত্তিকে পরিবর্তন করা যায় না। ১৯৯৮ সালে ম্যানহাটনে কনফারেন্সে সাইকোএনালিটিক এসোসিয়েসন তাদের পূর্ববর্তী হোমোফোবিক ব্যবহারের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে।
১৯৯৯ সালে আমেরিকান একাডেমী অব পেডিয়াট্রিক্স, আমেরিকান কাউন্সিলিং এসোসিয়েশন, আমেরিকান এসোসিয়েশন অব স্কুল এডমিনিস্ট্রেটরস, আমেরিকান ফেডারেশন অব টিচার্স, আমেরিকান সাইকোলজিকাল এসোসিয়েশন, আমেরিকান স্কুল হেলথ এসোসিয়েশন, ইন্টারফেইথ এলায়েন্স ফাউন্ডেশন, ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব স্কুল সাইকোলজিস্ট, ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব সোশাল ওয়ার্কার এবং ন্যাশনাল এডুকেশন এসোসিয়েশন একটি যৌথ বিবৃতিতে সমাকামিতাকে একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হিসেবে উল্লেখ করে তাদের উপর যে কোন ধরণের আক্রমণ, আগ্রাসন এবং বৈষম্যের নিন্দা করেন। পশ্চিমা বিশ্বে কোন আধুনিক চিকিৎসকই সমকামিতাকে এখন আর ‘রোগ’ বা বিকৃতি বলে আর চিহ্নিত করেন না।
সমকামিতার কিছু পারিভাষিক শব্দঃ
কিন্তু আরো কিছু মানুষ আছে যারা স্বাভাবিক জীবন যাপনের ক্ষমতা রাখা স্তত্বেও এই বিকৃত পথে হাটে। তাদের জন্য এই রচনা লেখা। সমকামিতা আসলে দুই ধরনের
১। Homosexual act
২. Homosexual Lifestyle
Homosexual act হচ্ছে স্বাভাবিক মানুষের সমকামী ব্যবহার করা। যেটা সে একটু চেক দিয়ে চললেই এড়াতে পারে। হোমোসেক্সুয়াল লাইফস্টাইল হচ্ছে দুজন সমকামী মানূষের এক সাথে বসবাস করা যেমন সাধারন মানুষ বাস করে। তারা দুজন একসাথে সঙ্গীর মত বসবাস করে, সুখে দুঃখে একে অন্যের পাশে থাকে।ভালবাসা থাকে এখানে। কিন্তু সমকামীদের মাঝে এই প্রবণতা খুব কম লক্ষ্য করা যায়। তাদের মধ্যে এক নম্বর বৈশিষ্ট্য বেশী প্রকট। তাদের প্রধান লক্ষ্য থাকে সেক্স যা পশুদের প্রধান কাজ। মানুষ হিসেবে পশুদের কাজ কখনো মানুষ সমাজে গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। পশুরা সারা বছর যৌন তাড়নায় ভোগেনা। কিন্তু একশ্রেনীর মানুষ আছে যারা সেক্স ছাড়া জীবনের আর কোন মানে খুঁজে পায় না।
সমকামীদের কয়েকভাগে ভাগে বিভক্ত করা যায়।
১। Gay বা পুরুষ সমকামী
২। Lesbian বা নারী সমকামী
৩। Shemale বা হিজড়া
৪। Bisexual বা দ্বৈত যৌন জীবন
হিজড়া আর বাইসেক্সুয়াল’রা মূলত উভকামী তবে তাদের মধ্যে সমকামী বৈশিষ্ট্য বেশী প্রকট থাকে। যৌন তাড়না বা প্রবৃত্তির ভিত্তিতে মানুষ কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
ক)সমকামীঃ সমলিঙ্গের মানুষের প্রতি যারা যৌন তাড়না অনুভব করে।
খ)উভকামীঃ যারা নারী-পুরুষ উভয়ের প্রতি যৌন বাসনা অনুভব করে।
গ)বিসমকামী বা অসমকামীঃ যারা বিপরীত লিঙ্গের মানুষের প্রতি যৌন তাড়না অনুভব করে।
বাংলাদেশে গে লাইফস্টাইল দেখা যায় না। তাই আমার ধারণা ৯৯ ভাগ সমকামী পুরুষকে বাইসেক্সুয়াল জীবন যাপন করতে হয়। যেখানে তারা প্রকাশ্যে সাধারন মানুষের মত স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সংসার করছে। অন্য দিকে গোপনে সমকামিতা চালিয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের মানুষ দের দ্বারা আমাদের তরুন বিশেষ করে কিশোর রা সমকামি দুনিয়ায় ঢুকছে। যেটা মানব সভ্যতার জন্য মোটেও সুখকর নহে।
আমি লেখার শুরুতে টপ বলে একটা শব্দ উল্লেখ করেছি, একজন পাঠক জানতে চেয়েছেন বিষয়টা কি। গুগল সার্চে জানা গেল।সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশনের কারনে গে’রা নিজেদের কে কয়েকটি শ্রেনীতে বিভক্ত করেছে। প্রধান ভাগ তিনটি। এগুলোর আবার উপভাগ আছে।
অ) টপঃ যারা যৌন মিলনের হওয়ার সময় পুরুষের রোল প্লে করে।
আ) বটমঃ যারা নারী রোলে উপগত হয় সঙ্গীর সাথে।
ই) ভারসেটাইলঃ যারা পুরুষ নারী যে কোন রোল প্লে করতে পারে।
#কিছু পরিচিত সমকামী ব্যক্তি#
মাইকেল জ্যাকসনের বিরুদ্ধে শিশু সমকামীতার অভিযোগ ছিল। বিষয়টি নিয়ে লিখতে গিয়ে আরো কিছু পরিচিত মানুষের নাম পেয়ে গেলাম যারা ব্যক্তি জীবনে সমকামী ছিলেন।
১। লিউয়োনারদো ডা ভিঞ্চি।
২। আলেক্সান্ডার দি গ্রেট
৩। সম্রাট সালাউদ্দিন
৪। রিকি মারটিন
৫। ওস্কার ওয়াইল্ড
৬। ফ্রান্সিস বেকন
৭। এরিস্টটল
৮। এলেন গিনেসবারগ, সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড কবিতার লেখক।
আমার লেখা পড়ে যদি আপনার ধারণা হয়ে থাকে যে পৃথিবীতে সমকামীদের জয়জয়কার তাহলে ভূল করবেন। সারা পৃথিবীতে তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য।পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার তুলনায় শতকরা হিসেবে তাদের পরিমান ভগ্নাংশ।তাদের বিরুদ্ধে কিংবা পক্ষে আন্দোলনের ইতিহাসও অনেক লম্বা।
(আন্দোলন-বিরোধী আন্দোলন নিয়ে লেখা অনেক বড় হবে। অনেক উপাত্ত। পরে লিখব)
**সমকামিতার কুফল**
এক্ষেত্রে প্রথমে এইডস এর কথা বলতেই হয়। মানুষের মধ্যে প্রথম এইডস এর বিস্তার ঘটে পশুকামিদের দ্বারা। এই সব বিকৃতকামী মানুষগুলো মানব সভ্যতায় এক মরণ বীজ রোপন করে গেছে যার ফল মানব সমাজকে আরো কত শতাব্দী বয়ে বেড়াতে হবে জানিনা। পশুকামীদের দ্বারা সংক্রমিত এই রোগ প্রথম ধরা পড়ে সমকামিদের মধ্যে। সেজন্য অনেকেই সমকামিতাকে এইডস রোগের মূল হিসেবে চিহ্নিত করে। যদিও তার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বা ব্যাখ্যা নাই।
(লেখা চলবে)
**ইসলামে সমকামিতা**
ইসলামে সমকামিতা হারাম। মানব সভ্যতার উন্নয়নে সমকামিতা এক বড় অন্তরায়। পৃথিবীতে মানুষের ফ্যামিলি ট্রি বাঁচিয়ে রেখেছে প্রজনন ধারা। সমকামিতা এমনই এক স্থবির সিস্টেম যেখানে বংশবিস্তারের কোন সুযোগ নাই।
*হাদিস ও কুরআনের আলোকেঃ
আল কুরআন এবং হাদিসের নানা জায়গায় সমকামিতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আল কুরানের সাত জায়গায় লুত (আঃ) এর কওমের কথা বলা হয়েছে যাদের কে সমকামিতার অপ্রাধের জন্য আল্লাহ রব্বুল আলামিন ধংশ করে দেন। লুত (আঃ) এর কওম বাস করত সোদম ও গোমরাহ নগরীতে। এই সোদম থেকে ইংরেজী সোডোমি শব্দটি এসেছে যেটা পায়ুকাম বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
*আল কোরআনের সাত জায়গাঃ
১। সুরা আল আরাফের ৮০-৮৪ আয়াত
২। সুরা হুদ এর ৭১-৮৩ আয়াত
৩। সুরা আল আম্বিয়া এর ৭৪ আয়াত
৪। সুরা আল হাজ্জ্ব এর ৪৩ আয়াত
৫। সুরা আশ-শুয়ারা এর ১৬৫-১৭৫ আয়াত
৬। সুরা আন-নামল এর ৫৬-৫৯ আয়াত
৭। সুরা আনকাবুত এর ২৭-৩৩ আয়াত
“And (We sent) Lut when he said to his people: What! do you commit an indecency which any one in the world has not done before you? Most surely you come to males in lust besides females; nay you are an extravagant people. And the answer of his people was no other than that they said: Turn them out of your town, surely they are a people who seek to purify (themselves). So We delivered him and his followers, except his wife; she was of those who remained behind. And We rained upon them a rain; consider then what was the end of the guilty.”
আরবিতে সোডোমি কে বলা হয় liwat, আর যারা সমকাম করে তাদের বলা হয় luti, শব্দ দুটি হযরত লুত (আঃ) এর নাম থেকে এসেছে।
এবার আসুন আমরা দেখি হাদিসে কি বলা হয়েছে। ইসলামী চিন্তাবিদেরা রাসূল (সাঃ) এর হাদীস ও সীরাহ থেকে সমকামিতার শাস্তি মৃত্যদন্ড বিধান দিয়েছেন।
ইবনে আল যাওয়াজি থেকে বরনিত আছে যে রাসুল (সাঃ) কয়েকটি হাদিসে সমকামিতাকে অভিশাপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং টপ ও বটম দুজনের জন্য মৃত্যদন্ডের শাস্তি ঘোষণা দিয়েছেন।
সুনানে আল-তিরমিজিীর ভাষ্য অনুসারে রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন, “ কোথাও তুমি মানুষদেরকে লুতের কওমদের মত পাপ করতে দেখ, তাহলে তাকে হত্যা কর। যে এটা করে এবং যে এটাতে সাহায্য করে দুই জনকেই হত্যা করা।”
ইসলাম অনুসারে যে মানুষ লুতের কওমদের পাপ করে সে মুলত স্রষ্টার সৃষ্টির পথে বাধা সৃষ্টি করে। এক কথায় সে স্রষ্টার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এটা নৈতিক ও তত্ত্বীয় মুল সার কথা।
এই হাদিস গুলো থেকে প্রমানিত হয় ইসলাম পুর্বরতী আরব সমাজে ব্যাপকভাবে সমকামিতার প্রচলন ছিল। সমকামের প্রতি যে মানুষের আগ্রহ সেটা অস্বীকার করা যায় না। বিশ্বাসীদের জন্য আখিরাতে অপেক্ষা করছে বেহেশত। সেখানে তাদের মনোরঞ্জনের জন্য অপেক্ষা করছে লাস্যময়ী হুর আর সুদর্শন গেলমান। গেলমান কি তা স্পষ্ট ভাবে বলা হয় নাই। তবে পারস্যের কবিরা যাকে সাকী বলেছেন আরবের সাহিত্যে সেটাই গেলমান ইঙ্গিত করে। মুসলমানের জন্য মদ হারাম। বেহেশতে তাই মদের ফোয়ারা দেয়া হবে।
****চার মাযহাবে সমকামিতা নিয়ে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছেঃ
ইসলামী আইন ব্যাখ্যাকারী চার ইমাম সমকামিতার শাস্তি কি হবে তা নিয়ে একমত হতে পারেন নি। আবু বকর আল জাসাস বলেন, সমকামীদের হত্যা করার ব্যাপারে যে দুটি হাদিস আছে তা গ্রহনযোগ্য নয় এবং উক্ত হাদিস অনুসারে তাদেরকে কোন বৈধ শাস্তি দেয়া যেতে পারে না। হানাফী মাযহাব অনুসারে শারীরিক কোন শাস্তি দেয়া যেতে পারে না। তিনি এই হাদিস টি কে ভিত্তি হিসেবে ধরেন, "Muslim blood can only be spilled for adultery, apostasy and homicide”। ইমাম হাম্বলী এগুলোর বিরোধিতা করেন এবং সমকামিতার শাস্তি মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেন। ইমাম শাফী অর্থ দন্ডের দিকে মত দেন।
মৃত্যু কিভাবে কার্যকর হবে সে ব্যাপারে নানা মত আছে। আবু বকর বলেন, toppling a wall on the evil-doer অথবা জীবন্ত পুড়িয়ে মেরে ফেলা হোক। অন্যদিকে আলি বিন আবু তালিব লুতি কে পাথর মেরে হত্যা করার আদেশ দেন। ইবনে আব্বাস বলেন, এই শাস্তি অবশ্যই পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে দিতে হবে।
**মুসলিম দেশগুলোতে সমকামিতার শাস্তি**
অধিকাংশ মুসলিম দেশে সমকামিতাকে ক্রাইম হিসেবে দেখা হয় এবং শাস্তি হিসেবে মৃত্যদন্ড দেয়া হয়। সৌদি আরব, ইরান, মৌরিতানিয়া, উত্তর নাইজেরিয়া, সুদান, ইয়েমেন এ সমকামিতার শাস্তি হিসেবে মৃত্যদন্ড দেয়া হয়। তালেবান শাসনামলে আফগানিস্তানে সমকামিতার শাস্তি মৃত্যদন্ড দেয়া হত কিন্তু এখন সেটা জেল ও অর্থদন্ডে নামিয়ে আনা হয়েছে
ইউনাইটেড আরব আমিরাত ও বাংলাদেশে সমকামিতার বিরুদ্ধ আইন স্পষ্ট নয়।
অনেক মুসলিম দেশ যেমন বাহরাইন, কাতার, আলজেরিয়া, উজবেকিস্তান ও মালদ্বীপে সমকামিতার শাস্তি হিসেবে জেল, অর্থদন্ড ও শারীরিক শাস্তি দেয়া হয়। ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল কাতারে অনুষ্ঠিত হবে। পশ্চিমা বিশ্ব সুর তোলে কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবল হলে ফুটবলের সমকামী সমর্থকদের কাতার জেলে ভরে রাখবে। ফিফা সভাপতি স্লেপ বাটার মজা করে বলেন , "refrain from sexual activity" while in Qatar. কিন্তু মানবাধিকার সংস্থার আপত্তির কারনে তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করেন।
মিশরে সমকামিতার বিরুদ্ধে কোন আইন নেই, কিন্তু সমকামিতা সেখানে বৈধ নয়। তার জন্য জেল শাস্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। লেবাননে সমকামিতা বৈধ নয় কিন্তু সেভাবে শাস্তি দেয়া হয় না।
কিছু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ যেমন আলবেনিয়া, তুরস্ক, মালি, ইন্দোনেশিয়া জরডানের আইনে সমকামিতা অপরাধ নয়। আলবেনিয়া তে সমকামি বিবাহ কে আইনি স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। পাকিস্তানে দুই থেকে আজীবন জেল দেওয়া হয় সমকামিতার অপরাধে।
ইসলামী দেশ গুলোর মধ্যে ইরান প্রথম সারজারীর মাধ্যমে জেন্ডার পাল্টানোর সুযোগ করে দেয়। ট্রান্সযেন্ডারের সুযোগ দেয়ায় অনেক মানুষ হেটারোসেক্সুয়াল জীবনে ফিরতে সক্ষম হয়। ইসলামী বিপ্লবের পর ধরমীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনী ঘোষণা দেন ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে সেক্স রুপান্তর অবৈধ নয়। ইসলামে তৃতীয় জেন্ডারের মানুষদের বোঝাতে মুখান্নাতুন (mukhannathun) শব্দটি ব্যবহৃত হয়। থাইল্যান্ডের পর ইরানে সব থেকে বেশী জেন্ডার রুপান্তর করা হয়েছে।
পৃথিবীর প্রচলিত জীবন বিধানগুলোর মধ্যে একমাত্র ইসলাম সমকামিতার বিরুদ্ধে সরাসরি কথা বলেছে।
**বাইবেলে সমকামিতা**
মূল বাইবেলে সমকামিতা নিয়ে কোন উক্তি বা ভার্স নেই। তবে সেখানে পতিতা বৃত্তি নিয়ে কথা আছে। বাইবেলের অনেক ব্যাখ্যাকারী পতিতাবৃত্তি আর সমকামিতাকে একসাথে গুলিয়ে ফেলেছেন। সংস্করিত বাইবেলের কোন কোনটিতে সমকামিতা প্রসঙ্গটি এসেছে। কিন্তু সেটাকে তো বাইবেলের উক্তি হিসেবে নিতে পারি না। (আরো লেখা হবে এই সেকশানে)
**বাংলাদেশে সমকামিতা** (তথ্য প্রমান দরকার। আসছে)
আরো কোন সেকশান দেওয়া যায় কিনা বলবেন প্লিজ।
**সমকামিতা কিঃ
সমকামিতা একটি যৌন প্রবৃত্তি, যার দ্বারা সমলিঙ্গের দুই ব্যক্তির মধ্যে প্রেম কিংবা যৌন আচরণ বোঝায়। প্রবৃত্তি হিসেবে, সমকামিতা বলতে বোঝায় মূলত সমলিঙ্গের কোনো ব্যক্তির প্রতি জেগে ওঠা "এক যৌন, স্নেহ বা প্রণয়ঘটিত এক ধরনের স্থায়ী স্বাভাবিক প্রবণতা"; "এছাড়া এর দ্বারা এই ধরনের সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ব্যক্তিগত বা সামাজিক পরিচিতি, এই ধরনের আচরণ এবং সমজাতীয় ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত এক সম্প্রদায়ের সদস্যতাও নির্দেশিত হয়।
**সমকামিতা শব্দের মূলঃ
সমকামিতা শব্দটি বিশেষ্য। এটা এসেছে মুলতঃ বিশেষণ সমকামী। ভাশাগত দিক থেকে সম মানে একই এবং কামী মানে বাসনাকারী। তাই সমকামী শব্দটির অথ দাড়াচ্ছে একই রকম বাসনাকারী। কিন্তু প্রয়োগগত অথ ভিন্ন। সমকামী শব্দটির মূল সংস্কৃত সমকামিন। মূল ধাতুর সাথে ইন প্রত্যয়যোগে গঠিত হয়েছে সমকামিন (সম+কাম+ইন) যার অথ যে ব্যক্তি সমলৈঙ্গিক ব্যক্তির প্রতি যৌন আকরষণ বোধ করে। প্রাচীন কালে সমকামীদের বোঝাতে ঔপরিস্টক শব্দটি ব্যবহৃত হত। বাতস্যায়নের কামসুত্রের ষষ্ঠ অধিকরণের নবম অধ্যায়ে ঔপরিস্টক শব্দটির ব্যবহার দেখা যায়।
সমকামিতার ইংরেজী প্রতি শব্দ হোমোসেক্সুয়ালিটি, যা ১৮৬৯সালে প্রথম ব্যবহার করেন Karl Maria Cutberry তার লেখা ছোট একটি আইনি পুস্তিকায়। Homosexual শব্দটি গ্রীক হোমো এবং ল্যাটিন সেক্সাস শব্দের সমন্বয়ে গঠিত।
বাংলাদেশ মোটামুটি রক্ষণশীল দেশ। এখানে সমকামিতা নিয়ে কথা বললে বিতরকো হবে। বাঙ্গালীরা সাধারনতঃ সমকামিতা নিয়ে কথা বলতে ইতস্তত বোধ করি। বাঙ্গালী লেখকদের মধ্যে ডাঃ লুতফর রহমান প্রথম সমকামিতার খারাপ দিক তুলে ধরেন তার যুবক জীবনবইয়ে। সেখানে তিনি ছোট একটি ঘটনার পরিসরে দেখান যে কিভাবে একজন উঠতি তরুন তার গৃহশিক্ষকের দ্বারা সমকামী জীবনে ঢুকে নিজের জীবনকে অস্থিতিশীল করে তোলে।
*প্রাচীন ইতিহাসে সমকামিতাঃ
আজকালকার শিক্ষিতদের অনেকের মুখে বলতে শোনা যায় সমকামিতা একুশ শতকের কোন বিষয়, কলিযুগের পাপ। কিন্তু প্রাচীন ইতিহাসে সমকামিতার উদাহরন খুঁজে পেলাম। প্রাচীন গ্রীসের পুরাণ আর ধর্ম শাস্ত্রগুলোতে সমকামী স্পৃহার উল্লেখ দেখা যায়।সমকামীদের কামনার দেবি ছিল ভেনাস। শুক্র গ্রহের ইংরেজী নাম ভেনাস যা ভেনাস দেবীর নামে নামকরণ করা হয়। বাংলায় যাকে আমরা সুখ তারা বা সন্ধ্যাতারা নামে চিনি। আমি অবাক হয়ে খেয়াল করছি বাংলায় কেন এই গ্রহটার নাম রাখা হল শুক্র। শুক্র হল পুরুষের বীর্য। আর সমকামীরাই উপাসনা করে এই গ্রহের। একটা আদি মিলের সন্ধান দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ওইতিহাসিক প্রমান না থাকায় আমি সেদিকে যাচ্ছি না। প্রিয়াপাস বলে সমকামীদের আরাধ্য আরেকজন দেবতা ছিল প্রাচীন গ্রিসে। এশিয়া মাইনর থেকে গাল্লিদের হাত ধরে সিবিলি পূজা পারস্যে সংক্রমিত হয়। আজকের ইরান হচ্ছে সেই পারস্য। তারপর ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তে।
ইসলামের আবির্ভাবের যুগে আরব সমাজে ব্যাপকভাবে সমকামিতার প্রচলন ছিল। সে যুগটা আসলেই অন্ধকার যুগ ছিল। তবে সমকামিতার থেকে শিশু কামিতার প্রচলন ছিল বেশী। এই আরবদের বশে আনতে কি ইসলামে হুরের পাশাপাশি গেলমানের কথা বলা হয়েছে?
আরব্য কবিদের কবিতায় সাকী শব্দটার যথেচ্ছ ব্যবহার হত। আমাদের জাতীয় কবি নজরুলের কবিতার সাকী ও সূরার ব্যবহার প্রথম শুনি। আমি ভাবতাম সাকী মানে মদ বা এলকোহল। কিন্তু সুরা মানেই হচ্ছে মদ। আর সাকী মানে হচ্ছে মদ পরিবেষণকারী সুন্দর রমনী, বালিকা ও বালক। সুন্দর লাস্যময় কোমল সেই বালক দের কাজ শুধু পান পাত্রে মদ ঢেলে দেওয়া ছিলনা। সে সাথে মালিকের জৈবিক চাহিদা পুরনে তাদের শয্যাসঙ্গী হতে হত।
তাহিতির বিভিন্ন জায়গায় এমন কিছু মূর্তি পাওয়া গেছে যেগুলোতে দুজন পুরুষের যৌনমিলন দেখা যায়। আনাতোলিয়া, গ্রিস, রোমের বিভিন্ন মন্দিরে সিবিলি ও ডাইওনিসস এর পূজা হত। সিবিলির পুরোহিতরা মেয়েদের মত লম্বা চুল রাখত। এদের নাম ছিল গাল্লি। ধারণা করা হয় গাল্লিদের মাঝে ব্যাপক সমকামিতার প্রচলন ছিল। গ্রীক, রোমান, চৈনিক, পাপুয়া নিউগিনী এবং উত্তর আমেরিকার সভ্যতাগুলোতে এরকম অনেক উদাহরন আছে যা সেই সময়ে সমকামিতার উপস্থিতি প্রমাণ করে।
হিন্দু শাস্ত্র পূরাণে পুরুষীনি বা তৃতীয় প্রকৃতি বলে উল্লেখ আছে যা দ্বারা উভকামিতা বা সমকামিতাকেই বোঝানো হয়েছে। গুজরাটের শংখলপুরে বহুচোরা মাতার যে প্রতিমা আছে সেটা দেখতে অনেকটা সিবিলির মত। তবে কি গাল্লিদের সিবিলি পূজা পারস্য হয়ে প্রাচীন ভারতে প্রবেশ করেছিল।
*মূঘল বংশে সমকামিতাঃ
বাবর একজন গোঁড়া সুন্নি মুসলিম ছিল। সে তার শিয়া মুসলিমদের অপছন্দ করাকে কখনও কখনও ব্যক্ত করেছিল " তাদের বিচ্যুতি " বলে ।যদিও ধর্ম বাবরের জীবনের এক প্রধান স্থান ছিল এবং তার সহযোগী রাজারা ইসলামকে হালকা ভাবে গ্রহণ করেছিল। বাবর তার সমকালীন এক কবির কবিতার একটি লাইন প্রায় উদ্ধৃত করতেন:" আমি মাতাল, আধিকারিক।আমাকে শাস্তি দিন যখন আমি সংযমি। " বাবরের সহযোগী রাজারা মদ পান করতেন এবং প্রাচুর্য্য পূর্ণ ভাবে জীবন যাপন করতেন, তারা বাজারের ছেলের সঙ্গে প্রেমে পড়েছিল এবং তারা হিংস্র এবং নির্মম ছিলেন।
বাবরের এক কাকার মতে "অধর্ম এবং পাপকার্জে সে আসক্ত হয়েছিল। সে সমকামিতেও আসক্ত হয়ে পড়েছিল। তার এলাকাতে, যখনই শান্ত কোনো যুবক তার সামনে এসেছে, তাকে পাবার জন্য সে সবকিছু সে করেছিল। তার সময় এই ধরনের সমকামিতা প্রচলিত ছিল এবং সেটা একটি গুণহিসাবে বিবেচনা করা হোতো। । " সে তার মৃত্যূর দুই বছর আগে সুরাপান ত্যাগ করেছিলেন এবং তিনি তার রাজসভায় সকলকে একই কাজ করার দাবী করেছিলেন। কিন্তু সে নিজে আফিং এর নেশা ছাড়তে পারেননি।এবং তার কি বোধ হারানি। বাবর লিখেছিলেন: " সবাই সুরাপান পছন্দ করে ,পান করার জন্য শপথ নেয়,আমি শপথ নিয়েছিলাম এবং অনুতাপ করেছিলাম।
*আজকের ভারতে সমকামিতাঃ
পৃথিবীর অনেক দেশ এখন সমকামিতাকে কে সামাজিক স্বীকৃতি দিচ্ছে তার মানে এই নয় যে এটা সব দেশেই স্বীকৃতি পাবার মত কোন বিষয়। কিন্তু সমকামিতা বিষয়টি পুরোপুরি উপেক্ষা করার মত নয়। আমাদের পাশের দেশ ভারতের সিনেমা গুলোতে এখন সম বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে। যেমন দস্তানা। যদিও ওই সিনেমাটিতে বিষয়টিকে দুই বন্ধু আর তাদের বান্ধবীর মাঝে মজা হিসেবে দেখানো হয়েছে। বলিউডের আরেকটি ছবি আই লাভ ইউ বেবী তে লেসবিয়ান বা নারী সমকামীর কাহিনী স্পস্টভাবে ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে। আরো কিছু ছবি যেমন গোলমাল টু তে সমকামিতা কে দেখানো হয়েছে ফান হিসেবে। তবে সমকামিতার নিরিখে দস্তানা প্রচার পেয়েছে বেশী।
সমকামিতা সাধারণত ভারতীয় নাগরিক সমাজ ও সরকারের কাছে একটি নিষিদ্ধ বিষয়। ভারতে সমকামিতা নিয়ে সাধারণ আলোচনার সুযোগ কম। তার কারণ যৌনতা সংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়েই ভারতে খোলামেলা আলোচনা হয় না। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সমকামিতার প্রতি ভারতীয়দের মনোভাবে কিছু পরিবর্তন লক্ষিত হয়েছে। বিশেষত, ভারতের সংবাদমাধ্যম ও বলিউডে সমকামিতার প্রদর্শন ও আলোচনার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ সালের ২ জুলাই, দিল্লি হাইকোর্টের একটি রায়ে স্পষ্টত জানানো হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সম্মতিক্রমে সমকামিতার আচরণ অপরাধের আওতায় পড়ে না। এই রায়ে আরো বলা হয়েছে যে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার রক্ষা নীতির পরিপন্থী।
ভারতে প্রথা ও রীতিনীতির ক্ষেত্রে ধর্মের ভূমিকা অপরিসীম। ভারতের বৃহত্তম ধর্ম হিন্দুধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলিতে সমকামিতার সুস্পষ্ট উল্লেখ না থাকলেও, ধর্মগ্রন্থের কোনো কোনো ব্যাখ্যাকে সমকামিতার বিরোধী মনে করা হয়। তবে ভারতের প্রধান ধর্মবিশ্বাসে সমকামিতার অবস্থান কোথায়, তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে দ্বিমত আছে। কেউ কেউ মনে করেন প্রাচীন হিন্দু সমাজে সমকামিতা শুধু প্রাসঙ্গিকই ছিল না, বরং তা গ্রহণীয়ও ছিল।
সমকামিতা কি মানসিক সমস্যা???????
ডাক্তারী বিদ্যা বা Medical Science একসময় সমকামিতাকে মানসিক অসুস্থতা হিসেবে অভিহিত করত। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান প্রমান করতে সক্ষম হয়েছে যে সমকামিতা বিষয়টি জেনেটিক কোডিং এর কারনে হয়। একটি সফটয়্যারকে যে ভাবে কোডিং করা হয় সেভাবেই সে কাজ করে। তেমনি একটি মানুষের জিন কে যে ভাবে কোডিং বা ডিএনএ বিন্যস্ত করা হয় সে সেরকমই বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। এখানে মানুষের কোন হাত নাই। সব জীবিত প্রানীর বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয় জেনেটিক কোডিং দ্বারা। তাই প্রকৃত সমকামী ব্যাক্তিকে আমি দোষ দেই না। আসলে তার নিজের কিছু করার থাকে না। সে প্রকৃতির রহস্যময়তার শিকার। কিন্তু আমি বাইসেক্সুয়াল দের ছাড় দিতে রাজি নই। তারাই মূলত আসল পাপী। তারা তো বিয়ে করেন, তাদের সন্তান হয়। আজ থেকে যদি বিশ-পঁচিশ বছর পরে আপনার ছেলে যদি আপনাকে বলে, “বাবা আমি সমকামী। আমি মেয়েদের নয় পুরুষদেরকে পছন্দ করি। আমি একটি ছেলের সাথে জীবন কাটাতে চাই, তাকে বিয়ে করতে চাই।” পারবেন মেনে নিতে ছেলের আবদার। যদি পারেন তাহলে তো কথাই নাই। বাপকা বেটা। আর যদি না পারেন তাহলে আপনার কি অধিকার সমকামিতা করার?
বিজ্ঞানীরা আজ মেনে নিয়েছেন যে, শুধু মানুষের মধ্যে নয় সব প্রানীর মধ্যেই সমকামিতার অস্তিত্ব আছে। কাজেই সমকামিতা প্রকৃতিজগতের একটি বাস্তবতা। আরো জানা গিয়েছে যে, সমকামিতার ব্যাপারটা কোন জেনেটিক ডিফেক্ট নয়। একটা সময় সমকামিতাকে স্রেফ মনোরোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হত। চিকিৎসকেরা বিভিন্ন থেরাপি দিয়ে তাদের চিকিৎসা করতেন। এর মধ্যে শারিরীক নির্যাতন, শক থেরাপি, বমি থেরাপি সব কিছুই ছিলো, কিছু ক্ষেত্রে জোর করে এদের আচরণ পরিবর্তন করলেও পরে দেখা গেছে অধিকাংশই আবার তারা সমকামিতায় ফিরে যায়। এ ধরনের অসংখ্য নথিবদ্ধ দলিল আছে। আসলে বহু ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে যাবার পর ডাক্তাররা এবং অন্যান্য অনেকেই আজ মেনে নিয়েছেন, সমকামিতা যৌনতার একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। সেজন্যই কিন্তু ১৯৭৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বর আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন বিজ্ঞানসম্মত আলোচনার মাধ্যমে একমত হন যে সমকামিতা কোন নোংরা ব্যাপার নয়, নয় কোন মানসিক ব্যধি। এ হল যৌনতার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি।
১৯৭৫ সালে আমেরিকান সাইকোলজিকাল এসোসিয়েশন একইরকম অধ্যাদেশ প্রদান করে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন ১৯৮১ সালে সমকামিতাকে মানসিক রোগের তালিকা থেকে অব্যহতি দেয়। আমেরিকান ল ইন্সটিটিউট তাদের মডেল পেনাল কোড সংশোধন করে উল্লেখ করে –‘ কারো ব্যক্তিগত যৌন আসক্তি এবং প্রবৃত্তিকে অপরাধের তালিকা হতে বাদ দেয়া হল’। আমেরিকান বার এসোসিয়েশন ১৯৭৪ সালে এই মডেল পেনাল কোডের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে সমকামিতাকে সামাজিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করে। এর ফলে সমকামীরা পায় অপরাধবোধ থেকে মুক্তি।
আমেরিকান ১৯৯৪ সালে আমেরিকান সাইকোলজিকাল এসোসিয়েশন তাদের ‘স্টেটমেন্ট অন হোমোসেক্সুয়ালিটি’ শিরোনামের একটি ঘোষণাপত্রে সমকামিতাকে একটি স্বাভাবিক যৌনপ্রবৃত্তি হিসেবে উল্লেখ করে এবং কারো যৌনপ্রবৃত্তিকে পরিবর্তন করার যে কোন প্রচেষ্টাকে অনৈতিক বলে উল্লেখ করা হয়। আমেরিকান মেডিকেল এসোসিয়েশন ১৯৯৪ সালের একটি রিপোর্টে সমকামিতাকে স্বাভাবিক যৌনপ্রবৃত্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, এবং অভিমত ব্যক্ত করে যে, সমকামীদের যৌনতার প্রবৃত্তি পরিবর্তনের চেষ্টা না করে বরং তারা যেন সমাজে ভালভাবে বেঁচে থাকতে পারে আমাদের সেই চেষ্টা করা উচিৎ।
একাডেমী অব পেডিইয়াট্রিক্স এবং কাউন্সিল অব চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট হেলথ স্পষ্ট করেই বলে যে সমকামিতা কোন চয়েস বা পছন্দের ব্যাপার নয়, এবং এই প্রবৃত্তিকে পরিবর্তন করা যায় না। ১৯৯৮ সালে ম্যানহাটনে কনফারেন্সে সাইকোএনালিটিক এসোসিয়েসন তাদের পূর্ববর্তী হোমোফোবিক ব্যবহারের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে।
১৯৯৯ সালে আমেরিকান একাডেমী অব পেডিয়াট্রিক্স, আমেরিকান কাউন্সিলিং এসোসিয়েশন, আমেরিকান এসোসিয়েশন অব স্কুল এডমিনিস্ট্রেটরস, আমেরিকান ফেডারেশন অব টিচার্স, আমেরিকান সাইকোলজিকাল এসোসিয়েশন, আমেরিকান স্কুল হেলথ এসোসিয়েশন, ইন্টারফেইথ এলায়েন্স ফাউন্ডেশন, ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব স্কুল সাইকোলজিস্ট, ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব সোশাল ওয়ার্কার এবং ন্যাশনাল এডুকেশন এসোসিয়েশন একটি যৌথ বিবৃতিতে সমাকামিতাকে একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হিসেবে উল্লেখ করে তাদের উপর যে কোন ধরণের আক্রমণ, আগ্রাসন এবং বৈষম্যের নিন্দা করেন। পশ্চিমা বিশ্বে কোন আধুনিক চিকিৎসকই সমকামিতাকে এখন আর ‘রোগ’ বা বিকৃতি বলে আর চিহ্নিত করেন না।
সমকামিতার কিছু পারিভাষিক শব্দঃ
কিন্তু আরো কিছু মানুষ আছে যারা স্বাভাবিক জীবন যাপনের ক্ষমতা রাখা স্তত্বেও এই বিকৃত পথে হাটে। তাদের জন্য এই রচনা লেখা। সমকামিতা আসলে দুই ধরনের
১। Homosexual act
২. Homosexual Lifestyle
Homosexual act হচ্ছে স্বাভাবিক মানুষের সমকামী ব্যবহার করা। যেটা সে একটু চেক দিয়ে চললেই এড়াতে পারে। হোমোসেক্সুয়াল লাইফস্টাইল হচ্ছে দুজন সমকামী মানূষের এক সাথে বসবাস করা যেমন সাধারন মানুষ বাস করে। তারা দুজন একসাথে সঙ্গীর মত বসবাস করে, সুখে দুঃখে একে অন্যের পাশে থাকে।ভালবাসা থাকে এখানে। কিন্তু সমকামীদের মাঝে এই প্রবণতা খুব কম লক্ষ্য করা যায়। তাদের মধ্যে এক নম্বর বৈশিষ্ট্য বেশী প্রকট। তাদের প্রধান লক্ষ্য থাকে সেক্স যা পশুদের প্রধান কাজ। মানুষ হিসেবে পশুদের কাজ কখনো মানুষ সমাজে গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। পশুরা সারা বছর যৌন তাড়নায় ভোগেনা। কিন্তু একশ্রেনীর মানুষ আছে যারা সেক্স ছাড়া জীবনের আর কোন মানে খুঁজে পায় না।
সমকামীদের কয়েকভাগে ভাগে বিভক্ত করা যায়।
১। Gay বা পুরুষ সমকামী
২। Lesbian বা নারী সমকামী
৩। Shemale বা হিজড়া
৪। Bisexual বা দ্বৈত যৌন জীবন
হিজড়া আর বাইসেক্সুয়াল’রা মূলত উভকামী তবে তাদের মধ্যে সমকামী বৈশিষ্ট্য বেশী প্রকট থাকে। যৌন তাড়না বা প্রবৃত্তির ভিত্তিতে মানুষ কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
ক)সমকামীঃ সমলিঙ্গের মানুষের প্রতি যারা যৌন তাড়না অনুভব করে।
খ)উভকামীঃ যারা নারী-পুরুষ উভয়ের প্রতি যৌন বাসনা অনুভব করে।
গ)বিসমকামী বা অসমকামীঃ যারা বিপরীত লিঙ্গের মানুষের প্রতি যৌন তাড়না অনুভব করে।
বাংলাদেশে গে লাইফস্টাইল দেখা যায় না। তাই আমার ধারণা ৯৯ ভাগ সমকামী পুরুষকে বাইসেক্সুয়াল জীবন যাপন করতে হয়। যেখানে তারা প্রকাশ্যে সাধারন মানুষের মত স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সংসার করছে। অন্য দিকে গোপনে সমকামিতা চালিয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের মানুষ দের দ্বারা আমাদের তরুন বিশেষ করে কিশোর রা সমকামি দুনিয়ায় ঢুকছে। যেটা মানব সভ্যতার জন্য মোটেও সুখকর নহে।
আমি লেখার শুরুতে টপ বলে একটা শব্দ উল্লেখ করেছি, একজন পাঠক জানতে চেয়েছেন বিষয়টা কি। গুগল সার্চে জানা গেল।সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশনের কারনে গে’রা নিজেদের কে কয়েকটি শ্রেনীতে বিভক্ত করেছে। প্রধান ভাগ তিনটি। এগুলোর আবার উপভাগ আছে।
অ) টপঃ যারা যৌন মিলনের হওয়ার সময় পুরুষের রোল প্লে করে।
আ) বটমঃ যারা নারী রোলে উপগত হয় সঙ্গীর সাথে।
ই) ভারসেটাইলঃ যারা পুরুষ নারী যে কোন রোল প্লে করতে পারে।
#কিছু পরিচিত সমকামী ব্যক্তি#
মাইকেল জ্যাকসনের বিরুদ্ধে শিশু সমকামীতার অভিযোগ ছিল। বিষয়টি নিয়ে লিখতে গিয়ে আরো কিছু পরিচিত মানুষের নাম পেয়ে গেলাম যারা ব্যক্তি জীবনে সমকামী ছিলেন।
১। লিউয়োনারদো ডা ভিঞ্চি।
২। আলেক্সান্ডার দি গ্রেট
৩। সম্রাট সালাউদ্দিন
৪। রিকি মারটিন
৫। ওস্কার ওয়াইল্ড
৬। ফ্রান্সিস বেকন
৭। এরিস্টটল
৮। এলেন গিনেসবারগ, সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড কবিতার লেখক।
আমার লেখা পড়ে যদি আপনার ধারণা হয়ে থাকে যে পৃথিবীতে সমকামীদের জয়জয়কার তাহলে ভূল করবেন। সারা পৃথিবীতে তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য।পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার তুলনায় শতকরা হিসেবে তাদের পরিমান ভগ্নাংশ।তাদের বিরুদ্ধে কিংবা পক্ষে আন্দোলনের ইতিহাসও অনেক লম্বা।
(আন্দোলন-বিরোধী আন্দোলন নিয়ে লেখা অনেক বড় হবে। অনেক উপাত্ত। পরে লিখব)
**সমকামিতার কুফল**
এক্ষেত্রে প্রথমে এইডস এর কথা বলতেই হয়। মানুষের মধ্যে প্রথম এইডস এর বিস্তার ঘটে পশুকামিদের দ্বারা। এই সব বিকৃতকামী মানুষগুলো মানব সভ্যতায় এক মরণ বীজ রোপন করে গেছে যার ফল মানব সমাজকে আরো কত শতাব্দী বয়ে বেড়াতে হবে জানিনা। পশুকামীদের দ্বারা সংক্রমিত এই রোগ প্রথম ধরা পড়ে সমকামিদের মধ্যে। সেজন্য অনেকেই সমকামিতাকে এইডস রোগের মূল হিসেবে চিহ্নিত করে। যদিও তার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বা ব্যাখ্যা নাই।
(লেখা চলবে)
**ইসলামে সমকামিতা**
ইসলামে সমকামিতা হারাম। মানব সভ্যতার উন্নয়নে সমকামিতা এক বড় অন্তরায়। পৃথিবীতে মানুষের ফ্যামিলি ট্রি বাঁচিয়ে রেখেছে প্রজনন ধারা। সমকামিতা এমনই এক স্থবির সিস্টেম যেখানে বংশবিস্তারের কোন সুযোগ নাই।
*হাদিস ও কুরআনের আলোকেঃ
আল কুরআন এবং হাদিসের নানা জায়গায় সমকামিতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আল কুরানের সাত জায়গায় লুত (আঃ) এর কওমের কথা বলা হয়েছে যাদের কে সমকামিতার অপ্রাধের জন্য আল্লাহ রব্বুল আলামিন ধংশ করে দেন। লুত (আঃ) এর কওম বাস করত সোদম ও গোমরাহ নগরীতে। এই সোদম থেকে ইংরেজী সোডোমি শব্দটি এসেছে যেটা পায়ুকাম বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
*আল কোরআনের সাত জায়গাঃ
১। সুরা আল আরাফের ৮০-৮৪ আয়াত
২। সুরা হুদ এর ৭১-৮৩ আয়াত
৩। সুরা আল আম্বিয়া এর ৭৪ আয়াত
৪। সুরা আল হাজ্জ্ব এর ৪৩ আয়াত
৫। সুরা আশ-শুয়ারা এর ১৬৫-১৭৫ আয়াত
৬। সুরা আন-নামল এর ৫৬-৫৯ আয়াত
৭। সুরা আনকাবুত এর ২৭-৩৩ আয়াত
“And (We sent) Lut when he said to his people: What! do you commit an indecency which any one in the world has not done before you? Most surely you come to males in lust besides females; nay you are an extravagant people. And the answer of his people was no other than that they said: Turn them out of your town, surely they are a people who seek to purify (themselves). So We delivered him and his followers, except his wife; she was of those who remained behind. And We rained upon them a rain; consider then what was the end of the guilty.”
আরবিতে সোডোমি কে বলা হয় liwat, আর যারা সমকাম করে তাদের বলা হয় luti, শব্দ দুটি হযরত লুত (আঃ) এর নাম থেকে এসেছে।
এবার আসুন আমরা দেখি হাদিসে কি বলা হয়েছে। ইসলামী চিন্তাবিদেরা রাসূল (সাঃ) এর হাদীস ও সীরাহ থেকে সমকামিতার শাস্তি মৃত্যদন্ড বিধান দিয়েছেন।
ইবনে আল যাওয়াজি থেকে বরনিত আছে যে রাসুল (সাঃ) কয়েকটি হাদিসে সমকামিতাকে অভিশাপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং টপ ও বটম দুজনের জন্য মৃত্যদন্ডের শাস্তি ঘোষণা দিয়েছেন।
সুনানে আল-তিরমিজিীর ভাষ্য অনুসারে রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন, “ কোথাও তুমি মানুষদেরকে লুতের কওমদের মত পাপ করতে দেখ, তাহলে তাকে হত্যা কর। যে এটা করে এবং যে এটাতে সাহায্য করে দুই জনকেই হত্যা করা।”
ইসলাম অনুসারে যে মানুষ লুতের কওমদের পাপ করে সে মুলত স্রষ্টার সৃষ্টির পথে বাধা সৃষ্টি করে। এক কথায় সে স্রষ্টার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এটা নৈতিক ও তত্ত্বীয় মুল সার কথা।
এই হাদিস গুলো থেকে প্রমানিত হয় ইসলাম পুর্বরতী আরব সমাজে ব্যাপকভাবে সমকামিতার প্রচলন ছিল। সমকামের প্রতি যে মানুষের আগ্রহ সেটা অস্বীকার করা যায় না। বিশ্বাসীদের জন্য আখিরাতে অপেক্ষা করছে বেহেশত। সেখানে তাদের মনোরঞ্জনের জন্য অপেক্ষা করছে লাস্যময়ী হুর আর সুদর্শন গেলমান। গেলমান কি তা স্পষ্ট ভাবে বলা হয় নাই। তবে পারস্যের কবিরা যাকে সাকী বলেছেন আরবের সাহিত্যে সেটাই গেলমান ইঙ্গিত করে। মুসলমানের জন্য মদ হারাম। বেহেশতে তাই মদের ফোয়ারা দেয়া হবে।
****চার মাযহাবে সমকামিতা নিয়ে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছেঃ
ইসলামী আইন ব্যাখ্যাকারী চার ইমাম সমকামিতার শাস্তি কি হবে তা নিয়ে একমত হতে পারেন নি। আবু বকর আল জাসাস বলেন, সমকামীদের হত্যা করার ব্যাপারে যে দুটি হাদিস আছে তা গ্রহনযোগ্য নয় এবং উক্ত হাদিস অনুসারে তাদেরকে কোন বৈধ শাস্তি দেয়া যেতে পারে না। হানাফী মাযহাব অনুসারে শারীরিক কোন শাস্তি দেয়া যেতে পারে না। তিনি এই হাদিস টি কে ভিত্তি হিসেবে ধরেন, "Muslim blood can only be spilled for adultery, apostasy and homicide”। ইমাম হাম্বলী এগুলোর বিরোধিতা করেন এবং সমকামিতার শাস্তি মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেন। ইমাম শাফী অর্থ দন্ডের দিকে মত দেন।
মৃত্যু কিভাবে কার্যকর হবে সে ব্যাপারে নানা মত আছে। আবু বকর বলেন, toppling a wall on the evil-doer অথবা জীবন্ত পুড়িয়ে মেরে ফেলা হোক। অন্যদিকে আলি বিন আবু তালিব লুতি কে পাথর মেরে হত্যা করার আদেশ দেন। ইবনে আব্বাস বলেন, এই শাস্তি অবশ্যই পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে দিতে হবে।
**মুসলিম দেশগুলোতে সমকামিতার শাস্তি**
অধিকাংশ মুসলিম দেশে সমকামিতাকে ক্রাইম হিসেবে দেখা হয় এবং শাস্তি হিসেবে মৃত্যদন্ড দেয়া হয়। সৌদি আরব, ইরান, মৌরিতানিয়া, উত্তর নাইজেরিয়া, সুদান, ইয়েমেন এ সমকামিতার শাস্তি হিসেবে মৃত্যদন্ড দেয়া হয়। তালেবান শাসনামলে আফগানিস্তানে সমকামিতার শাস্তি মৃত্যদন্ড দেয়া হত কিন্তু এখন সেটা জেল ও অর্থদন্ডে নামিয়ে আনা হয়েছে
ইউনাইটেড আরব আমিরাত ও বাংলাদেশে সমকামিতার বিরুদ্ধ আইন স্পষ্ট নয়।
অনেক মুসলিম দেশ যেমন বাহরাইন, কাতার, আলজেরিয়া, উজবেকিস্তান ও মালদ্বীপে সমকামিতার শাস্তি হিসেবে জেল, অর্থদন্ড ও শারীরিক শাস্তি দেয়া হয়। ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল কাতারে অনুষ্ঠিত হবে। পশ্চিমা বিশ্ব সুর তোলে কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবল হলে ফুটবলের সমকামী সমর্থকদের কাতার জেলে ভরে রাখবে। ফিফা সভাপতি স্লেপ বাটার মজা করে বলেন , "refrain from sexual activity" while in Qatar. কিন্তু মানবাধিকার সংস্থার আপত্তির কারনে তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করেন।
মিশরে সমকামিতার বিরুদ্ধে কোন আইন নেই, কিন্তু সমকামিতা সেখানে বৈধ নয়। তার জন্য জেল শাস্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। লেবাননে সমকামিতা বৈধ নয় কিন্তু সেভাবে শাস্তি দেয়া হয় না।
কিছু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ যেমন আলবেনিয়া, তুরস্ক, মালি, ইন্দোনেশিয়া জরডানের আইনে সমকামিতা অপরাধ নয়। আলবেনিয়া তে সমকামি বিবাহ কে আইনি স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। পাকিস্তানে দুই থেকে আজীবন জেল দেওয়া হয় সমকামিতার অপরাধে।
ইসলামী দেশ গুলোর মধ্যে ইরান প্রথম সারজারীর মাধ্যমে জেন্ডার পাল্টানোর সুযোগ করে দেয়। ট্রান্সযেন্ডারের সুযোগ দেয়ায় অনেক মানুষ হেটারোসেক্সুয়াল জীবনে ফিরতে সক্ষম হয়। ইসলামী বিপ্লবের পর ধরমীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনী ঘোষণা দেন ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে সেক্স রুপান্তর অবৈধ নয়। ইসলামে তৃতীয় জেন্ডারের মানুষদের বোঝাতে মুখান্নাতুন (mukhannathun) শব্দটি ব্যবহৃত হয়। থাইল্যান্ডের পর ইরানে সব থেকে বেশী জেন্ডার রুপান্তর করা হয়েছে।
পৃথিবীর প্রচলিত জীবন বিধানগুলোর মধ্যে একমাত্র ইসলাম সমকামিতার বিরুদ্ধে সরাসরি কথা বলেছে।
**বাইবেলে সমকামিতা**
মূল বাইবেলে সমকামিতা নিয়ে কোন উক্তি বা ভার্স নেই। তবে সেখানে পতিতা বৃত্তি নিয়ে কথা আছে। বাইবেলের অনেক ব্যাখ্যাকারী পতিতাবৃত্তি আর সমকামিতাকে একসাথে গুলিয়ে ফেলেছেন। সংস্করিত বাইবেলের কোন কোনটিতে সমকামিতা প্রসঙ্গটি এসেছে। কিন্তু সেটাকে তো বাইবেলের উক্তি হিসেবে নিতে পারি না। (আরো লেখা হবে এই সেকশানে)
**বাংলাদেশে সমকামিতা** (তথ্য প্রমান দরকার। আসছে)
আরো কোন সেকশান দেওয়া যায় কিনা বলবেন প্লিজ।
১১২টি মন্তব্য
০৪ ঠা মে, ২০১২ সকাল ১০:১৬
লেখক বলেছেন: অস্বীকার করব না। পোস্ট হিট করার জন্য এই
বিতর্কিত বিষয় নিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম।
১০১. ২০ শে মে, ২০১২ সকাল
১১:২৯
ভাবসাধক বলেছেন: জেনেটিক কারনে সমকামির সংখ্যা খুবই নগন্য, গোনার মধ্যে ধরা যায়না। জেনেটিক কারণই যদি মুখ্য হতো
তাহলে মানুষ প্রথম জীবনে স্বাভাবিক থেকে পরবর্তিতে সমকামী হতো না। প্রথম থেকেই
সমকামী হতো।
বরং মানসিক সমস্যার কারনেই বিশ্বে এদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বরং মানসিক সমস্যার কারনেই বিশ্বে এদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
০৪ ঠা জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:২৪
লেখক বলেছেন: আচ্ছা কেউ কি বাই বর্ন সমকামী হয়ে জন্মায়? নাকি সকল জেনেটিক বৈশিষ্ট্য শৈশবেই প্রকাশ পায়?
১০২. ২০ শে মে, ২০১২ সকাল
১১:৫০
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: সমকামিতা মানসিক সমস্যা না জেনেটিক সমস্যা, এটা নতুন না পুরাতন এইসব বিষয়ের চেয়ে এটা মানুষের জন্য
ভাল না খারাপ সেটাই গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত।
নি:সন্দেহে সকল বৈজ্ঞানিক, ডাক্তারী, সামাজিক দৃস্টিতে এটা ক্ষতিকর - এবং ক্ষতিকর বলেই একে নিশিদ্ধ করা, যথা সম্ভব প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। মনে রাখা উচিত - মদ, গাঁজা, হিরোইনসহ সকল মাদকের প্রতি কিছু মানুষের অস্বাভাবিক আকর্ষণ দেখা যায়, কিছু কিছু মানুষের মাঝে থাকে আত্মহত্যার প্রবনতা, এমনকি খুনের প্রবনতাসম্পন্ন মানুষও বিরল নয় - কিন্তু এ'গুলো সবই ক্ষতিকর বিধায় নিশিদ্ধ।
একইভাবে সমকামিতার প্রবনতা জন্মগতভাবে কিছু মানুষের মাঝে আছে বলেই এর প্রতি সমর্থন দেয়ার কোন যুক্তি নাই - এটা ক্ষতিকর এবং অবশ্বই নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে প্রতিহত করার চেস্টা থাকতে হবে। যদি একে স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করা তাহলে এর প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকাই বেশী। যেমন যে সমাজে মদ কে স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহন করা হয়েছে সেখানে মদের প্রবনতা বেড়েছে। যে সমাজে খুনের স্বাস্তি হ্রাস করা হয়েছে সেখানেই খুন-জখমের প্রবনতাও বেড়েছে।
সুতরাং সমকামিতাকে ঘৃনা করতে হবে, আইনের মাধ্যমে নিশিদ্ধ করতে হবে এবং সমকামীদের দৃস্টান্তমুলক স্বাস্তি দিতে হবে যাতে অন্য যাদের মধ্যে এই প্রবনতা আছে তারাও সংযমী হতে বাধ্য হয়। অন্যথায় সমাজে অশ্লিলতা, নির্লজ্জ-বেহায়াপনা এমনভাবে বিস্তার লাভ করবে যার পরিনতি হবে ভয়াবহ।
নি:সন্দেহে সকল বৈজ্ঞানিক, ডাক্তারী, সামাজিক দৃস্টিতে এটা ক্ষতিকর - এবং ক্ষতিকর বলেই একে নিশিদ্ধ করা, যথা সম্ভব প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। মনে রাখা উচিত - মদ, গাঁজা, হিরোইনসহ সকল মাদকের প্রতি কিছু মানুষের অস্বাভাবিক আকর্ষণ দেখা যায়, কিছু কিছু মানুষের মাঝে থাকে আত্মহত্যার প্রবনতা, এমনকি খুনের প্রবনতাসম্পন্ন মানুষও বিরল নয় - কিন্তু এ'গুলো সবই ক্ষতিকর বিধায় নিশিদ্ধ।
একইভাবে সমকামিতার প্রবনতা জন্মগতভাবে কিছু মানুষের মাঝে আছে বলেই এর প্রতি সমর্থন দেয়ার কোন যুক্তি নাই - এটা ক্ষতিকর এবং অবশ্বই নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে প্রতিহত করার চেস্টা থাকতে হবে। যদি একে স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করা তাহলে এর প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকাই বেশী। যেমন যে সমাজে মদ কে স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহন করা হয়েছে সেখানে মদের প্রবনতা বেড়েছে। যে সমাজে খুনের স্বাস্তি হ্রাস করা হয়েছে সেখানেই খুন-জখমের প্রবনতাও বেড়েছে।
সুতরাং সমকামিতাকে ঘৃনা করতে হবে, আইনের মাধ্যমে নিশিদ্ধ করতে হবে এবং সমকামীদের দৃস্টান্তমুলক স্বাস্তি দিতে হবে যাতে অন্য যাদের মধ্যে এই প্রবনতা আছে তারাও সংযমী হতে বাধ্য হয়। অন্যথায় সমাজে অশ্লিলতা, নির্লজ্জ-বেহায়াপনা এমনভাবে বিস্তার লাভ করবে যার পরিনতি হবে ভয়াবহ।
০৪ ঠা জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:২৫
লেখক বলেছেন: বাংলাদেশী আইনে সমকামিতা নিষিদ্ধ। ৩৭৭
ধারা মোতাবেক। নতুন আর কি কি আইন করা যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন।
১০৩. ২৬ শে মে, ২০১২ সকাল
১০:৩৬
জাহাংগীর বলেছেন: ইসলামে সমকামিতা হারাম। মানব
সভ্যতার উন্নয়নে সমকামিতা এক বড় অন্তরায়। পৃথিবীতে মানুষের ফ্যামিলি ট্রি
বাঁচিয়ে রেখেছে প্রজনন ধারা। সমকামিতা এমনই এক স্থবির সিস্টেম যেখানে
বংশবিস্তারের কোন সুযোগ নাই।ধন্যবাদ।
০৪ ঠা জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:২৬
লেখক বলেছেন: কয়েকদিন আগে মাহাথির মোহাম্মাদ এই কথাটিই
বলেছেন।
১০৪. ১৫ ই জুন, ২০১২ রাত
১০:১৩
০৪ ঠা জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:২৮
লেখক বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
১০৫. ২১ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল
১১:১৭
ভালবাসাকারেকয় বলেছেন: কোরআনে সমতামিতা সম্পর্কে যেসব আয়াত আছে এবং
শাস্তির কথা আছে তা তুলে ধরুন এবং পরকালের শাস্তির কথাও তুলে ধরুন।
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:১৬
লেখক বলেছেন: আমি আমার জানা টুকু তুলে ধরেছি।
১০৬. ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর
১:৪৫
সুমন ঘোষ বলেছেন: যাই হোক পড়লাম। বেশ উদাহরণ সংযুক্ত বা
ক্লিন্কসহ গুছিয়ে লেখা হয়েছে । পড়ে ভালো লাগলো। যদিও বিষয়টা ব্যক্তিগত এবং তা
সমাজের হাত ধরে ক্রমে ক্রমে তা রাষ্ট্রগত ব্যাপার । তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে আমার
চিন্তা ভাবনা অনুযা্য়ী - সমকামী কখনই আমার কাছে গ্রহণ যোগ্য নয় । তার কারন:
১। সমকামী মানে যদি সমলিন্গের সাথে যৌন আক্ষাংকা মেটানো হয়ে থাকে তা হলে সেটা বেশ জঘন্যতম । প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি চরিতার্থ শুধু বিসম লিংগেই হয় । ঈশ্বর-আল্লা আমাদের দেহ সেই ভাবেই সৃষ্টি করেছেন বা প্রাকৃতিক ভাবে আমরা ( পুরুষ ও নারী ) সেই ভাবেই সৃষ্টি হয়েছি। যার কারনেই বংশগতি ।
২। সমকামী মানে যদি সমলিন্গের সাথে সারাজীবনের জন্য একসাথে বসবাস বা সংসার করা হয়ে থাকে তবে প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি চরিতার্থ তারা অন্য কোন স্থানে গিয়ে বিসমলিংগের সাহায্য নেন - তা হলে সেটা মানা যায়। কিন্তু তাকে সমকামী বলা যাবে না।
অনেক সমকামী বলছেন - আমরা বিবাহ করব না - তাই আমরা দুই পুরুষ বা দুই নারী একসাথে থাকবো চিরকাল ভালোবেসে ---ঠিক আছে সেটা ভালো । কেউ বিবাহ করতে নাই পারেন এটা তাঁর সিদ্ধান্ত । কিন্তু তার সাথে পায়ুমৈথন,মুখমৈথুন,অন্গুলি মৈথুন এ কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। নোংরা ঘৃনিত কাজ। এ এক মানসিক ব্যাধি বলা যায়। পশুদের হয় বলে কি মানুষেরও তা কাম্য কি ? তাহলে পশুদের থেকে মানুষের পার্থক্য কোথায় ?
অনেক সমকামী বলছেন - আমরা বিবাহ করব না -সন্তান উৎপাদন করবো না - সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার কিন্তু বিবাহ করে সন্তান না উৎপাদন করাও তো যায় ।আসল ব্যাপার - সব কিছুর স্বাভাবিকই ভালো, অস্বাভাবিক কোনকিছুই ভালো নয় । শ্বাসপ্রশ্বাস চলা ভালো কিন্তু অস্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস হলে বুঝতে হবে - মৃত্যু খুবই কাছে ।
আমি আমার ব্যক্তিগত দিক পর্ষালোচনা করে মন্তব্য করলাম মাত্র ...কাউকে ছোট করার জন্য নয় ।
১। সমকামী মানে যদি সমলিন্গের সাথে যৌন আক্ষাংকা মেটানো হয়ে থাকে তা হলে সেটা বেশ জঘন্যতম । প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি চরিতার্থ শুধু বিসম লিংগেই হয় । ঈশ্বর-আল্লা আমাদের দেহ সেই ভাবেই সৃষ্টি করেছেন বা প্রাকৃতিক ভাবে আমরা ( পুরুষ ও নারী ) সেই ভাবেই সৃষ্টি হয়েছি। যার কারনেই বংশগতি ।
২। সমকামী মানে যদি সমলিন্গের সাথে সারাজীবনের জন্য একসাথে বসবাস বা সংসার করা হয়ে থাকে তবে প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি চরিতার্থ তারা অন্য কোন স্থানে গিয়ে বিসমলিংগের সাহায্য নেন - তা হলে সেটা মানা যায়। কিন্তু তাকে সমকামী বলা যাবে না।
অনেক সমকামী বলছেন - আমরা বিবাহ করব না - তাই আমরা দুই পুরুষ বা দুই নারী একসাথে থাকবো চিরকাল ভালোবেসে ---ঠিক আছে সেটা ভালো । কেউ বিবাহ করতে নাই পারেন এটা তাঁর সিদ্ধান্ত । কিন্তু তার সাথে পায়ুমৈথন,মুখমৈথুন,অন্গুলি মৈথুন এ কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। নোংরা ঘৃনিত কাজ। এ এক মানসিক ব্যাধি বলা যায়। পশুদের হয় বলে কি মানুষেরও তা কাম্য কি ? তাহলে পশুদের থেকে মানুষের পার্থক্য কোথায় ?
অনেক সমকামী বলছেন - আমরা বিবাহ করব না -সন্তান উৎপাদন করবো না - সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার কিন্তু বিবাহ করে সন্তান না উৎপাদন করাও তো যায় ।আসল ব্যাপার - সব কিছুর স্বাভাবিকই ভালো, অস্বাভাবিক কোনকিছুই ভালো নয় । শ্বাসপ্রশ্বাস চলা ভালো কিন্তু অস্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস হলে বুঝতে হবে - মৃত্যু খুবই কাছে ।
আমি আমার ব্যক্তিগত দিক পর্ষালোচনা করে মন্তব্য করলাম মাত্র ...কাউকে ছোট করার জন্য নয় ।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)